ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

পদ্মায় অবৈধ ড্রেজারের ছড়াছড়ি

বালু যেন সাদা সোনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শিবচর, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ২২:২২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বালু যেন সাদা সোনা

পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু

শিবচরে প্রমত্ত পদ্মা নদীর তলদেশ খনন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থেমে নেই। উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর চর, চরচান্দ্রা এলাকার কাওলিপাড়াসহ পদ্মাসেতুর দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যেই দিনরাত চলছে বালু উত্তোলন। এ ছাড়াও কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার নদীবর্তী চর কেটেও মাটি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং এবং শিবচর সীমান্ত এলাকাতেও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়,  বর্তমানে অর্ধশত ড্রেজার বালু উত্তোলনের কাজে সক্রিয় রয়েছে। পদ্মাসেতুর কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের কাউলিপাড়া এলাকার নদীর নতুন একটি চ্যানেলে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খুচরা বাজারে এই বালু বিক্রি হয় প্রতি ঘনফুট ৮-১০ টাকা দরে! এই বালুই যেন হোয়াইট গোল্ড বা সাদা সোনা! ড্রেজারগুলো নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়ায় এনে নদীতে বালু উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সময় অভিযানে শ্রমিকেরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে বালু বিক্রয়ের মূল হোতারা এবং ড্রেজার মালিকগণ!
এদিকে বিভিন্ন সময়ে পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ, জড়িতদের আটক এবং জরিমানা করা হলেও থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালু বাল্কহেড দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয় এ সকল বালু। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় পদ্মার এই বালু এবং মাটি। শিবচর উপজেলার চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতাভুক্ত থাকলেও নামেমাত্র মাঝে-মধ্যে অভিযানের খবর পাওয়া যায়।

নৌ পুলিশের নাকের ডগায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নৌ পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ জনসাধারণের কাছে। চরজানাজাত ও কাঁঠালবাড়ী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরের (বাঘরা সীমানা, পোড়াকান্দি, চার নং পোল এলাকা) ড্রেজারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বালু কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।

নতুন জেগে ওঠা চর ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলেও বালুখেকোদের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে ফসলীয় জমি। অভিযোগ রয়েছে, চরে চাষ করা ফসলসহ জমির মাটি কেটে বিক্রি করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও তেমন কোনো প্রতিকার হয়নি বলেও জানা গেছে। গত ৫ আগস্টের আগে নিয়মিত এই সকল এলাকার চরের মাটি কেটে নিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছে।’

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি বলেন, ‘৩৩টি ড্রেজারের  কাগজপত্র (অনুমতি) আছে বালু তোলার। তবে বালু বিক্রয়ের অনুমতি নাই। আমারও একটা ড্রেজার চলে। আমি ৩ লাখ টাকা দিয়ে কাগজ কিনেছি। ৩৩টার বাইরেও ড্রেজার চলে। তবে প্রশাসন অভিযান চালালে কিছুদিন বন্ধ থাকে। তবে সুযোগ পেলেই ড্রেজার চালায়।’ তিনি আরও বলেন, ড্রেজার থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে বালু ফেলার নিয়ম থাকলেও বালু মূলত বাল্কহেড ভরে নিয়ে বিক্রি করা হয়। তবে ‘অনুমতি কারা দেয় বা কাগজপত্র কিসের’ এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি! 
এদিকে, আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবচরের চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত তিন মাসে পদ্মা নদী থেকে ২৪টি বাল্কহেড ও ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। 
শিবচরের চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত কয়েক মাসে অনেক ড্রেজার আটক করেছি। পদ্মা নদীর মাগুরখন্ড, কাওলিপাড়া এলাকায় ড্রেজারগুলো চলে।  অনেকেরই ড্রেজার চালানোর কাগজপত্র রয়েছে। যাদের কগজপত্র নেই আমরা সেগুলো আটক করেছি।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ‘পদ্মায় বালু উত্তোলনকারী সব ড্রেজারই অবৈধ। আমরা অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ৬টি ড্রেজার জব্দ, ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ একজনকে ৩০ দিনের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

×