ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

সাতক্ষীরায় ১০ দিনেও ভাঙা বাঁধ মেরামত হয়নি

শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার পরিবারের দুর্বিষহ জীবন

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার পরিবারের দুর্বিষহ জীবন

বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে

বৃষ্টির পানির সঙ্গে বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের পানিতে ভাসছে সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার ১০৬টি গ্রাম। সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নের পানিবন্দী প্রায় ৫০ হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ঘর হতে বের হওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। নলকূপগুলো ডুবে আছে। বাথরুম করতে পারছে না।

গোসল করার ব্যবস্থা নেই। কাঁচাপাকা পায়খানাগুলো পানিতে মিলেমিশে একাকার। খেটে খাওয়া মানুষদের কাজ নেই।  মানুষের মনে স্বস্তি নেই। 
বাঁধ ভাঙা পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ১০ হাজার ছোটবড় পুকুর আর মাছের ঘের। মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, শুধু মাছের ঘের থেকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। ভেসে যাওয়া মাছের ঘের মালিকদের মধ্যে চলছে হাহাকার। গত দশ দিন ধরে পানিবন্দী এ সব পরিবারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দী পরিবারের সদসরা এখন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কাজ না থাকায় এসব পরিবার এখন খাদ্য সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা ৪ দিনের বৃষ্টিতে তালা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৪৩টি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে নগরঘাটা, কুমিরা, তেঁতুলিয়া, তালা সদর, ইসলামকাটি জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশি।  এরসঙ্গে ১৫ সেপ্টেম্বর বিনের পোতা এলাকায় বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে যায়  বেতনা নদীসংলগ্ন তালা ও সদর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম।

লোকালয়, পুকুর আর ভেসে যাওয়া মাছের ঘেরগুলো পানিতে ভাসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা ডিভিশন ২র নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইমলাম মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সম্ভব হলেও ২১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা বাঁধ ভেঙে যায়। যশোরের উজান থেকে আসা পানির চাপে বাঁধ প্রায় ৩শ’ মিটার ভেঙে যায়। এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

দুয়েকদিনের মধ্যে বাঁধ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা। এদিকে বৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। নিষ্কাশনের মাধ্যম বেতনা নদী নাব্য হারিয়ে এখন উজানের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। সদরের লাবসা, বল্লি, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ইউনিয়নসহ এলাকার পানি নিষ্কাশন খালগুলো কাজ না করায় এবং অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ করায় নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এমনকি পৌরসভার নিষ্কাশন চ্যানেলগুলো দখল করে মাছ চাষ করায় এমন বিপর্যয় বলে মনে করছেন নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। 
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য বেতনা নদীতে খনন কাজের জন্য দেওয়া বিভিন্ন স্থানের ক্রসড্যামগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নিয়ন্ত্রণে এলে জলাবদ্ধ এলাকার পানি কমতে শুরু করবে।

×