ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

যে গ্রামে রাস্তা নেই, সেতু নেই, স্কুল নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যে গ্রামে রাস্তা নেই, সেতু নেই, স্কুল নেই

দড়িটানা ডিঙ্গি নৌকায় সরস্বতী নদী পার হচ্ছে রশিদপুর নয়াপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা

রশিদপুর নয়াপাড়া। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি অবহেলিত গ্রাম। উল্লাপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হাটিকুমরুল ইউনিয়নে এই গ্রামের অবস্থান। গ্রাম থেকে বের হবার কোনো রাস্তা নেই। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরস্বতী নদী। নদীর ওপর নেই কোনো সেতু। গ্রামের ভেতরের একমাত্র রাস্তাটি নেমেছ সরস্বতী নদীতে। বর্ষা মৌসুমে সেই ঘাটে রশিটানা ডিঙ্গি নৌকা পারাপারের বাহন।

খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো। গ্রামবাসীর উদ্যোগে নৌকা আর সাঁকোর ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। দু’হাজারেরও বেশি মানুষের বাস এই গ্রামে। পার্শ¦বর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। গ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শতাধিক। এসব শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন নদীপার হয়ে দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতায়াতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। নানামুখী সমস্যা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন এখানকার মানুষ। 
রশিদপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলী, বেল্লাল ভুইয়া, আব্দুর রাজ্জাক আব্দুল হাই জানান, উল্লাপাড়া উপজেলার মধ্যে খুবই অবহেলিত গ্রাম তাদের রশিদপুর নয়াপাড়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এই গ্রামে প্রবেশের একটি রাস্তার জন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে অনেকবার আবেদন করেছেন। আবেদন করেছেন পাশের অপ্রশস্ত সরস্বতী নদীর ওপর একটি পাকা সেতুর।

কিন্তু তাদের এই আবেদন কখনই আমলে নেয়নি কেউ। গ্রামবাসীর উদ্যোগে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাটধারী পূর্বপাড়া থেকে নয়াপাড়া ময়নাল খন্দকারের বাড়ির পূর্বপাশ পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরাসহ গ্রামের লোকজন নয়াপাড়ার ওয়াজেদ আলীর বাড়ি সংলগ্ন ঘাটের রশি টানা নৌকায় পারাপার হয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। তবে রাস্তাটি খুবই বেহাল।

যাতায়াতের অযোগ্য হওয়া স্বত্ত্বেও কোনো উপায় না পেয়ে গ্রামবাসীকে ভোগান্তি সহ্য করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগ নিরসনের কোনো উপায় তাদের জানা নেই। এমন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করতে হচ্ছে পুরো গ্রামবাসীর। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে তাদের গ্রাম থেকে বের হওয়ার রাস্তাটি পাঁকাকরণ এবং স্বরস্বতী নদীর ওয়াজেদ আলীর বাড়ি সংলগ্নœ ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ ও গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। 
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস প্রধান উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ উল্লেখিত গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, পাটধারী থেকে রশিদপুর নয়াপাড়া ময়নাল খন্দকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।  উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহম্মদ হাসনাত বলেন, নোট করে রাখছি নতুন প্রকল্পে নির্দেশনা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

×