ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের সাথে প্রধান শিক্ষকের প্রতারনা

পিকনিকের কথা বলে আদালতে নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের 

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:১২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পিকনিকের কথা বলে আদালতে নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের 

আদালত চত্বরে শিক্ষার্থীরা

পাবনার চাটমোহরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে আদালতে একটি মামলায় সাক্ষ্য দেয়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হলে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা।

সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাচুড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে সকল ছাত্র ছাত্রীদের তিনটি বাস ভাড়া করে পাবনা শহর অভিমুখে রওনা হন বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ। ছাত্র-ছাত্রীদের পাবনা রানা ইকো পার্কে পিকনিকের গন্তব্য থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান পাবনা আদালতে। এরপর সেখানে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছে মতো বয়ান শিখিয়ে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে বলেন।

মুলত প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত শত্রুতা বশত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ইভটিজিং মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করান এ সকল মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে, এমনটাই অভিযোগ অভিভাবকদের।

দীর্ঘ সময় আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান করায় অনেক ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পরে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে বাসায় ফোন করে তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। ঘটনাটি এলাকার সকল অভিভাবকদের এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার পর অভিভাবক ও শিক্ষক পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
 
শফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে এই বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে পড়ে। কয়েকদিন আগে মেয়ে সানজিদা মিম তাকে বলে ‘আব্বু আমাদের স্কুল থেকে স্যারেরা পিকনিকে নিয়ে যাবে’ এজন্য ২০০ টাকা চাঁদাও নিয়ে যায়। দুপুরে ওরা পিকনিকে যাওয়ার পর হেড মাস্টার ছেলে-মেয়েদের পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছে বলে জানতে পারেন তিনি।  পিকনিকের কথা বলে মেয়েকে কোর্টে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়ের মেয়েদের ইভটিজিং করার ঘটনায় কয়েকমাস আগে চাটমোহর থানায় আমি একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে অভিযোগটি পাবনা কোর্টে বিচারাধীন। সেই মামলায় সোমবার ১৫ জন মেয়ের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ ধার্য ছিল। পাবনায় মেয়েদের সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি সকল ছাত্র-ছাত্রীরা জানার পরে তারাও তাদের সহপাঠীদের সাথে পাবনা কোর্টে যেতে চায়। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলে এদিন পাবনা রানা ইকোপার্কে পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারাই বাস ভাড়া করেছে, তারাই সব আয়োজন করেছে। আমি শুধু পিকনিক স্পটে যাওয়ার আগে কোর্টে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়ে আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্য প্রদান করার ব্যবস্থা করিয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে আগেই অবহিত করেছিলাম।

 এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী জানান, মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে আগেই বলেছিলেন পাবনা কোর্টে একটা সাক্ষ্য প্রদান আছে শিক্ষার্থীদের। তবে পিকনিকের বিষয়টি তিনি আমাকে কিছু বলেননি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। পিকনিকের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কোর্টে নিয়ে যাওয়ার কাজটি মোটেই ঠিক হয়নি। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
 

 

শহিদ

×