ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

সেই সুধীর নট্রর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী 

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৭:২৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেই সুধীর নট্রর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুধীর নট্র

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা ডেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সেই সুধীর নট্ট’র (৪২) বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। (রেজিস্ট্রি নম্বর ২১৫ তারিখ ২৩.০৯.২৪) সিবরতন নামের এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের কপি উপ-পরিচালক, দুর্নীতি কমিশন, পটুয়াখালী ও ক্যাপ ইন চার্জ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাউফলকে দেয়া হয়েছে। 

অভিযোগকারী সিবরতনের বাড়ি বাউফলের দাশপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবার নাম সুনিল নট্র। অভিযোগে সিবরতন উল্লেখ করেন সুধীরের কতিথ মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করলেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শেখ হাসিনার ক্ষমতার সময়ে অনেক এমপি, মন্ত্রী, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য তার কাছে ধর্ণা ধরতেন। অথচ এই সুধীর নট্ট একসময় জীবন জীবিকার তাগিদে বাদাম বিক্রি করতেন। তার বাবা সুখ রঞ্জন নট্ট একসময় পান বিক্রি করতেন। তার মা দীপালি নট্ট অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। সুধীর নট্ট বাদাম বিক্রির পাশাপাশি সিনেমা হলের মাইকিং করতেন। তার গলার সুর ও ডায়লগ ভাল হওয়ায় একদিন নজরে পরেন স্থানীয় সাবেক এমপি আসম ফিরোজের। 

এরপর সুধীর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির মাইকিং করতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাবেক এমপি ফিরোজের সাথে। পেয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের লীগের প্রচার সম্পাদকের পদ। সুধির আসম ফিরোজের তার ঢাকার বাসভবনে যাতায়াত করতেন । এই সুবাধে সাবেক এমপি ফিরোজের মাধ্যমে সুধীরের পরিচয় হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে। একপর্যায়ে শিখরের সাথে সুধীরের সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সুধীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। অভিনয়ে পাকা সুধীর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম দেখাতেই মা বলে সম্বোধণ করেন। 

এরপর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুধীর একাধিকবার গণভবনে দেখা করেন। এভাবে অসংখ্যবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনি দেখা করেছেন। যখনই দেখা করতে যেতেন তখন তার এই মায়ের (শেখ হাসিনা) জন্য মাছ, মুরগীসহ নানাধরণের খাবার নিয়ে যেতেন। সে সুবাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাদুরকাঠি হয়ে যান। এরপর থেকে যাদুরকাঠিকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে বনে যান সুধীর নট্ট।

সুধীর নট্টর নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ও স্ত্রী সন্তানের তোলা ছবি দিয়েও নানা মহলে প্রভাব বিস্তার করতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুধীরের তোলা এ ছবি ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছেন সুধীরের আত্মীয়-স্বজনরাও। আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে সুধীর ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নেওয়া, থানার দালালি ও চাকরির তদবির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। 

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং ওসি সবাই তাকে সমিহ করতেন। গ্রামের খড়ের ঘর ভেঙে নির্মাণ করেন আধাপাকা ঘর। এরপর পৌর শহরে সম্পত্তি ক্রয় করে সেখানে নির্মান করেন দ্বিতল ভবন। সুধীরের ক্রয়কৃত সম্পত্তি আর ভবনের মূল্যই হবে দুই কোটি টাকার উপরে। তবে সু-চতুর সুধীর নিজের ব্যাংক হিসেবে কোন টাকা রাখতেন না। টাকা রাখতেন ঝালকাঠি বসবাসরত তার শ্বশুর সুখ রঞ্জন নট্র, বরিশাল সরকারী হাতেম আলী কলেজের কাছে বসবাসরত তার মামাতো বোন শিক্ষা রানী নট্র এবং ঢাকার কুড়িল বিশ্ব রোড খিলক্ষেত নিকুঞ্জ সার্ভিসিং সেন্টারের অয়েল ম্যানেজার তার মামা শান্তি রঞ্জন ও মামি টিটু রানীর ব্যাংক হিসাবে।  

পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক এক মেয়রকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার শর্তে বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে প্রায় তিন কোটি টাকার একটি ব্রিজের কাজ বাগিয়ে নেয় সুধীর। এভাবে অনেক উন্নয়ন কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে সুধীর নট্টর বিরুদ্ধে। এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, প্রভাব বিস্তার করে পৌর শহরের দাসপাড়ার একটি সার্বজননীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সুধীর নট্ট।

সুধীরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিরা তার হাত থেকে বাঁচতে ২০২১ সালের ২৭ মে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক প্রধামন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। ওই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গণভবনে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সুধীরের। বর্তমানে তিনি (সুধীর) জুতার ব্যবসা করছেন। সুধীরের স্ত্রী শহরের একটি প্রাইমারি স্কুলের সহকারি শিক্ষক।

সুধীর তার স্ত্রীর চাকরিও নিয়েছেন প্রভাব দেখিয়ে। প্রথমে তার স্ত্রী দাসপাড়া গ্রামের একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করতেন। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন করে পৌর শহরের তাকে বদলি করিয়ে আনেন সুধীর। তার বড় ছেলে পড়াশুনা করেন দুমকি ক্যান্টমেন্ট স্কুলে। সুধীর নট্টর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দারপাড়া গ্রামে। তবে দীর্ঘদিন থেকে তিনি বাউফল পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়ার বাসায় বসবাস করে আসছেন। 

এসআর

×