ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

তিন মাস পর ক্লাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিন মাস পর ক্লাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়  মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ৮৩ দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা শেষে রবিবার ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

নতুন পরিবেশে ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে এমন একটি ক্যাম্পাসের স্বপ্নই তারা দেখছেন। একই সঙ্গে আবাসিক হলগুলো ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতিপূরণে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন বলেন, যে ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি, সেই স্বপ্নের ক্যাম্পাস এখন দেখতে পাচ্ছি। সারারাত ধরে এখন আর ছাত্রলীগের গেস্টরুম করতে হবে না। ক্লাস শেষে মধুর ক্যান্টিনে কোনো প্রোগ্রামে যেতে হবে না। তিন বছর শেষে হলে একটি বৈধ সিট পেয়েছি। হলগুলোতে এখন পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন হচ্ছে আবাসিক হলগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই আবেদন, এই স্থিতিশীল ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ যেন তারা বজায় রাখেন।
খোঁজ নিয়ে যায়, ক্লাস চালুর প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ বাদে প্রায় সবগুলো বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সানজানা শেহরিন হৃদি বলেন, রবিবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ক্যাম্পাসে নতুন পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউই আর নির্দিষ্ট একটি দলের পরিচয়ে কারও ওপর প্রভাব দেখায় না। ক্লাসে ফিরে ভালো লাগছে। তবে আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যারা এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন, তাদের জন্য খারাপ লাগছে।

আশা করি, সরকার আহতদের চিকিৎসা নিয়ে আরও দ্রুত কাজ করবেন।
রবিবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতিপূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় পর ক্লাসে ফিরতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেসব সমস্যা এখনো রয়ে গেছে, সেগুলো আমরা দ্রুতই সমাধান করার চেষ্টা করব। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে, সেটি আমরা খুব দ্রুত পূরণের চেষ্ট করব। আমরা এখনো কিছু বিভাগের ক্লাস শুরু করতে পারিনি। আমাদের ছাত্র-শিক্ষকের সাহায্য প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি এগিয়ে আসে, তা হলে আমরা এসব প্রতিবন্ধকতা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব। এ সময় তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে পহেলা জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বন্ধে হয়ে যায় একাডেমিক কার্যক্রম।

এর মাঝে শুরু হয় কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং হাসিনা সরকারের পতনে ৬ আগস্ট খোলে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হলেও স্থবিরতায় ছিল একাডেমিক কার্যক্রম। এবার সেই একাডেমিক স্থবিরতা কাটল।

×