১৮ মাসের কার্যাদেশের সেতুর কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি
সেতুর নকশা জটিলতায় মঠবাড়িয়ায় হলতা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দুটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ সেতুটির অভাবে।
সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলেও চার বছর ধরে কাজ বন্ধ আছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেন। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ হলেও কাজ বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেতুর কাজ বন্ধ থাকার কারণে উপজেলার নলী জয়নগর গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী বরগুনার পাথরঘাটার নাচনাপাড়া রশিদিয়া বন্দর বাজার সংলগ্ন দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ শঙ্কায় রয়েছেন শেষ অবধি সেতুর কাজ হবে তো!
শুক্রবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়ন বলেশ্বর নদ থেকে শুরু হয়ে হলতা নদী মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। হলতা নদীর দুই তীর ভরাট হয়ে নদী সরু হয়ে গেছে। নাচনাপাড়া রশিদিয়া বন্দর বাজার সংলগ্ন সেতু কাজ শুরু হয়ে থেমে আছে। নদীর দুই তীরে শুধু সেতুর পাইলের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে সাঁকো তৈরি করে মানুষ চলাচল করছেন। জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে সাঁকো দিয়ে চলতে অসুবিধা হচ্ছে। সাঁকোটি ইতিমধ্যে পুরনো হয়ে গেছে। যেকোনো সময় এটি ভেঙে যেতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নলী জয়নগর গ্রামের হলতা নদীর ওপর ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর পিরোজপুরের আবির এন্ড সর্দার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণকাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। ২০২২ সালে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। ২০২০ সালের শেষ দিকে সেতুটির নির্মাণকাজ ৩৫ ভাগ শেষ হওয়ার পর নকশা জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের রেটে কাজ করতে না চাওয়াতে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়। পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়, যা বর্তমানে মঠবাড়িয়ার তহিদুল বাশার কবির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন।
নাচনাপাড়া মানিকখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আলী জানায়, সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে স্কুলে যেতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। পাশে যে সাঁকোটি আছে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। দ্রুত সেতুটি হলে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে সুবিধা হবে। মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম জানান, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। তাই আগের ডিজাইন করা সেতু অনেক নিচু হয়ে যায়। জাহাজ চলাচল করতে অসুবিধা হবে। এসব কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া কিছুটা টেন্ডার জটিলতাও ছিল। আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়।পুনরায় নতুন নকশা করে তিন ফুট উঁচু ডিজাইন করে পুনরায় টেন্ডার দিয়েছি। তহিদুল বাশার কবির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন। তারা অল্পের ভিতরেই কাজ শুরু করবেন।
নালিতাবাড়ী দুই বছরেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই
সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর থেকে জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারমারী-পলাশীকুড়া- বাতকুচি এলাকায় চেল্লাখালী নদীর ওপর নির্মিত মিনি স্টিল ব্রিজটি ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ গ্রামের হাজারো মানুষ। ওই ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় দুই পাড়ের মানুষ ৫/৬ কিলোমিটার ঘুরে চলাফেরা করছেন। তাই ভুক্তভোগীরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষের নদী পারাপারের কথা বিবেচনা করে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুকচিরে প্রবাহিত পাহাড়ি খর¯্রােতা চেল্লাখালী নদীর পলাশীকুড়া ও বাতকুচি এলাকায় এলজিএসপির অর্থায়নে মিনি স্টিল ব্রিজটি নির্মিত হয়। ব্রিজটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় বিগত ২০২২ সালে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। গত প্রায় ৫/৬ বছর আগেই এটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে। তখন কোনো প্রকার সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ব্রিজের লোহার পাইপগুলো অনেক আগেই জং ধরে ক্ষয় হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর বন্যায় ব্রিজের দুই পাশের মাটি ধসে যায়। পানির স্রোতের কারণে ব্রিজের পিলারগুলোর মাটি সরে যাওয়ায় নড়বড়ে হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর পর এলাকাবাসী মিলে ধসে যাওয়া অংশে বাঁশ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু দুই বছর আগে হঠাৎ বন্যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রবল ¯্রােতের তোড়ে ব্রিজটির মাঝ বরাবর দুই ভাগ হয়ে নদীর মধ্যে ধসে পড়ে। স্থানীয় বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ্জামান জানান, এই ব্রিজের দিয়ে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্ক, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বাতকুচি, মেষকুড়া, সমশ্চুড়া, বারমারী বাজার, পলাশীকুড়া, আন্ধারুপাড়া, ডালুকোনা, শেকেরকুড়া ও বোনারপাড়া গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন।
এমনকি পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, পলাশীকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাপ্তী ও বেগম রৌশন আরা একাডেমিতে শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করে। দুই বছর ধরে ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় হাজারো পথচারী এখন বিপদে পড়েছেন। তারা বিকল্প পথে কমপক্ষে ৫/৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে এসব গ্রাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করছেন। পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, মানুষের ভোগান্তি কমাতে চলতি বছরের প্রথম দিকে পরিবেশ ও মৃত্তিকা অধিদপ্তরের একটি টিম এসে পর্যাবেক্ষণ করে গেছে এবং এলজিইডির প্রকৌশলীরা এসে মাপজোক করেছেন।
তারা এখানে দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণের কথা বললেও দীর্ঘদিন হয়ে গেল কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে এলজিইডির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক জরিপ চালোনো হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলেই দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।