ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল

আওয়ামী লীগ দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন

আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বাংলাদেশকে নিজের ও পরিবারের  পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা, খুন, গুম ও আয়নাঘরে বছরের পর বছর বন্দি করে নির্মম নির্যাতন করেছে। বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে নদী ও সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের জনসভায় হামলা ও নৃশংস হত্যাকা- চালিয়েছে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ নামে অসংখ্য সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা, দেশে ভয়াবহ দুর্নীতি, লুটপাট, নৈরাজ্য সৃষ্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর দলীয় প্রশাসন দিয়ে গুলি বর্ষণ করে হত্যা, খুন ও গুম করাসহ অসংখ্য অপরাধজনক কাজ করেছে শেখ হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব স্তরে দলীয়করণ করে জনগণের মারাত্মক ক্ষতি করেছে আওয়ামী লীগ।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় পাবলিক ক্লাব মাঠে পীরগঞ্জ থানা বিএনপির আয়োজিত মহাসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। একইদিন ঠাকুরগাঁও ও রাণীশংকৈলেও বৈঠক করেন ফখরুল। 
তিনি বলেন, এ দেশের ছাত্র-জনতাকে আমি স্যালুট করি, তারা আন্তরিকভাবে আন্দোলন করে এ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। আমরাও তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। পীরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা জনসমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করার কারণে জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। 
সভায় বক্তব্য দেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক এমপি পীরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ, দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিয়া, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবাইদুল্লাহ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সফল সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, পীরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া, ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, পীরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা, জেলা ছাত্রদল নেতা কামাল আহম্মেদ, পীরগঞ্জ হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম মাস্টার, থানা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জুয়েল, যুবদল সভাপতি নজমুল হুদা মিঠু, পৌর যুবদল সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান আতিক প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁওয়ের সমাবেশে ফখরুল বলেন, দেশের সকল এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সমস্যা তৈরি করা সমীচীন ও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না সামগ্রিকভাবে তাদের উন্নয়ন হবে কিন্তু দেশের মানুষের জন্য উন্নয়ন হবে না।

সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এর অর্থ হচ্ছে অন্যান্যরা কাজ করছে না। তবে যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সেসব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। যে সমস্ত এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে সেখানে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সাহায্যকরণ অনুষ্ঠানে এসব বলেন।  
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ১৬ বছর ধরে মার খেয়ে জেলে গিয়ে অনেক অন্যায় জুলুমের শিকার হয়েছি ও ত্যাগ শিকার করছি শুধু এই ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

আমরা সবাই অনেক আশাবাদী হয়ে আছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারা জঞ্জালকে দূর করে দেশের এমন একটি পরিবশে তৈরি করবেন যে পরিবেশে সুস্থ উপায়ে ও সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবেন এবং সেই নির্বাচনে জনগণের একটি পার্লামেন্ট তৈরি করবেন।
বিএনপিও সংস্কার চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা ৩১ দফা সংস্কার দিয়েছি দুই বছর আগে। বার বার বিষয়গুলো নিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা আমরা সরকারে না গেলে মেইনটেন করতে পারব না। 
সবদিক চিন্তা করে সামনে যেন সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ও পার্লামেন্ট হয়।

আর যেন মানুষের প্রতি অন্যায় অত্যাচার না হয়। ছোট ছোট শিশুদের গুলি করে না হত্যা করা হয় শুধু মাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য যার যার সঙ্গে কথা বলা ও যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তাই করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান
জানান মির্জা ফখরুল।       
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানের সঙ্গে। ২০২৪ সালে যুদ্ধ করতে হলো দেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। ছাত্র আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ৪ জন শহীদ ও হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। স্বৈরাচার হাসিনা ২০১২ সাল থেকে আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। ৭শ’য়ের বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে।

হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিঃস্ব করা হয়েছে। তাদের আমলে ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ জনকে হত্যা করেছে। 
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য বর্তমান সরকারকে দাবি জানান। বক্তব্য শেষে তিনি আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ৪টি শহীদ ও ২৯ জন আহত সদস্যদের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় জেলা সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে তিনি জেলার রাণীশংকৈলে আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। এই বৈঠকে তিনি বলেন, যত প্রকার অত্যাচার, নির্যাতন আছে সবই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন। এ দেশের স্বাধীনতা ততক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ আমরা তা ধরে রাখতে পারব।

আওয়ামী লীগের মতো শুরু করলে আমরাও টিকতে পারব না। এদিন রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো মানুষের ওপর অন্যায়, জুলুম করবেন না। সামনে দুর্গাপূজা আসছে।

তাদের জানমাল নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলে মিলেমিশে বসবাস করব।’ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবির আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে খুনি হাসিনা হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। দেশে এখন কেয়ারটেকার সরকার রয়েছেন, দেশ সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়া হবে। সে সময় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এখনো বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। এখনো বাবার পথ চেয়ে সন্তান অপেক্ষা করছে, বাবা ফিরে আসবে কিন্তু ফিরে আসে না। গুম, খুন, আয়নাঘর বানিয়ে বিএনপির ওপর নির্যাতন চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। ফখরুল আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি যখন যাকে চান আমির বানান।

রাষ্ট্রপতি বানান, প্রধানমন্ত্রী বানান। আবার যখন যাকে চান ফকির বানান।’ শেখ হাসিনার পতনের দিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের ৪ তারিখে চিন্তাও করতে পারিনি ৫ তারিখে রাস্তায় এত মানুষ নেমে আসবে আর হাসিনার পতন ঘটাবে। সব শেষে জনতার ভয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে।’ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য জের্ড মূর্তজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সুলতানুল ফেরদৌস ন¤্র্র চৌধুরী, পয়গাম আলী, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকুল মজুমদার, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান আলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদক। সভা পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল্লাম আল ওয়াদুদ বিন নুর আলিফ ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী।

×