ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

দুশ্চিন্তায় পাট চাষিরা : উৎপাদন খরচ বেশি, দাম কম

এন কে বি নয়ন, বোয়ালমারী, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুশ্চিন্তায় পাট চাষিরা : উৎপাদন খরচ বেশি, দাম কম

লোকসানের মুখে পড়েছেন পাট চাষিরা, নেই ভালো দাম। ছবি: জনকণ্ঠ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। কৃষকেরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এবার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে লোকসান। এদিকে ভরা মৌসুমেও হাট- বাজারগুলোতে নেই তেমন পাট। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ মেট্রিক টন।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাটের আড়তগুলোতে ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রখর খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। এতে পাটের আশ কম হওয়ায় ফলনও অনেক কম হয়েছে। এছাড়া সার, বীজ, তেল,কীটনাশক ও মজুরির খরচ বেড়েছে কিন্তু এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

উপজেলার বিভিন্ন পাটের হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাট বেচাকেনায় মন্দাভাব। অথচ এ মৌসুমের সময় পাট বাজার থাকতো রমরমা। পাট বিক্রি করতে কেউ ভ্যানে করে, আবার কেউ মাথায় করে বাজারে এনেছেন। তবে তাদের সংখ্যা কম। এ অঞ্চলে পাটের গুণগত মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক আবুল শেখ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও লোকসানের শঙ্কা নিয়েই নিজেদের সবটুকু জমিতে পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে। যার কারনে খরচ বেড়েছে। ফলন মুটামুটি হলেও বাজারে পাটের দাম নেই।উপজেলার সুতালীয়া গ্রামের পাট চাষি সুবীর বিশ্বাস বলেন, এ বছর পাট কাটার পর আশপাশের খাল-বিল ও নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। মাথায় করে, ভ্যানে করে দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। পাট গাছের আঁটি ও জাগ দেওয়ার পর শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকনোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যেকোনো ফসলের জন্য করলে তারা অনেক লাভবান হতেন।

সহস্রাইল বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা মহানন্দ বিশ্বাস বলেন, এবার খরচ বেশী হয়েছে। ফলন তেমন ভালো হয়নি। এখন বাজারে যে দরে পাট বিক্রি হচ্ছে, এতে লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দুরে থাক খরচই উঠছে না। দাম না বাড়লে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। 

বড়গাঁ বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা পাট চাষি কালিকুমার বালা বলেন, ভালো মানের এক মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দামে পাট বিক্রি করে লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে। শ্রমের দামও উঠছেনা। 

বোয়ালমারী বাজারের পাট ব্যবসায়ী তৈয়েব বিশ্বাস জানান, এখন পাটের ভরা মৌসুম। তারপরও বাজারে পাটের আমদানি অনেক কম। হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করতেন, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাকও পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এ বছর ফরিদপুরে পাটের উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান অনেক ভালো। বর্তমানে মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে এটা ঠিক। 

তবুও পাট আবাদে চাষিদের আগ্রহ আছে। সরকার পাট চাষিদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। আমরা সব সময় চাষিদের পাশে আছি।

 এসআর

×