ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রাজশাহীতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

রাজনৈতিক দল গড়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজনৈতিক দল গড়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে নিতান্তই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে যে রিউমার বা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই শুনতে চাচ্ছে আমাদের থেকে। এটা আমরা এর আগেও স্পষ্টভাবে বলেছি- এখনই কোনো রাজনৈতিক দল খোলার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। 
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা আছেন, কারোরই ক্ষমতার অভিলাষ নেই। সবারই পেশাগত জীবন আছে, সবাই সেখানে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ একটা অভুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দায়িত্বটা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিয়েছে, সেটি যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।’
তবে সংষ্কারের আগে নির্বাচন নয়, বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সংষ্কারের কথা আমরা বলছি সেটা ছিল এক দফারই অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; কিন্তু এক দফার যে মূল অংশ, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ- সেই ব্যবস্থার বিলোপের জন্য যে সংষ্কারগুলো অত্যাবশকীয় সেগুলো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এটা জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই হয়েছে।

জনগণ নির্বাচনের জন্য কিংবা ক্ষমতার পালাবদলে অভ্যুত্থানের জন্য আসেনি। যদি আসত সেটা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আসত বলে আমি মনে করি। এই অভ্যুত্থান হয়েছে স্পষ্টভাবেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি যে ব্যবস্থাটা বিদ্যমান আছে এটা সংস্কার করে দিয়ে যেতে পারি, আমরা মনে করি যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, যে কোনো রাজনৈতিক সরকার এই অটোক্রেটিক একটা সিস্টেমের মধ্যে সে নিজেও অটোক্রেটিক হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। সে কারণে আমরা মনে করি- এই সংস্কারটা অত্যাবশকীয়। দেশের জনগণ যেভাবে দেশকে গড়তে চাইবে, দেশ পুনর্গঠনের যে প্রস্তাবনা দেশের মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসবে সেটার বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব হবে।’

এই সংষ্কারের কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে বসা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আছেন, তিনি এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান- এ দুজনের নেতৃত্বে আমাদের একটি টিম করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রেগুলার বেসিসে বসছেন।

অফিসিয়াল বসার বাইরেও আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছেন যাতে আমাদের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। দেশ পুনর্গঠনের এই যাত্রায় রাজনৈতিক দলসহ সকল স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত শনিবার আমরা বিজিএমইতে তিনজন উপদেষ্টাসহ আমাদের পুরো টিম একটা আলোচনায় ছিলাম। রবিবার থেকে (আজ) মঙ্গলবার, এই সময়টাতে কিন্তু গত সপ্তাহের তুলনায় যে আনরেস্ট ছিল সেটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায় খুব স্পেসিফিক দুই-তিনটা কারখানায় এখন আনরেস্টের মতো সিচুয়েশন আছে। সেটাও আমরা মনে করি দ্রুতই প্রশমন হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে কমিটি করে দিয়েছি, পর্যবেক্ষণ সেল করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। তারা আস্থা রেখেছেন বলে তাদের ধন্যবাদ জানাই। সেল খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে। আমাদের সেই কমিটি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায়, আশুলিয়ায় শ্রমিক আনরেস্টের জায়গায় ভিজিট করছেন এবং সমস্যাগুলোকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়করা মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়া নিয়েও প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমি এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব সেটা পালন করছি। যারা এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা মনে করছেন দেশ পুনর্গঠনের যে লড়াইটা সামনে আছে, সেই লড়াইয়ে দেশের জনগণের আশা আকাঙক্ষার প্রতিফলন করতে হলে তো জনগণের কথা শুনতে হবে। সেই কারণে তারা সব জায়গায় টিম করে যাচ্ছেন এবং মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছেন। সেখানে কিছু পরিস্থিতির কথা আমি শুনতে পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এটা পুরনো কালচার। যে কোন ভাল উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু মানুষ তো থাকেই। সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক ভুয়া, অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন। যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা আমরা বলি, তার পরই অনেকে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা করছেন। আমরা মনে করি, এগুলোর অবসান ঘটবে। আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল তা থাকবে এবং তার মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।’
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আব্দুর রহিম খান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এগারো জন মাঠে খেললেও আমরা ১৮ কোটি মানুষ এক হতে পারি ॥ রাবি সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, এগারোজন মাঠে খেললেও আমরা ১৮ কোটি মানুষ এক হয়ে যেতে পারি। সেটাকে আমাদের জাতীয় শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।

সেই স্পিরিটটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশ গড়ার যে লড়াইটা সেটা চালিয়ে যেতে হবে। মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে রাবি বনাম রুয়েটের মধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ আমাকে আমন্ত্রণ করার জন্য। আমার সঙ্গে এলে খেলাধুলা যায়। আমাদের এই সরকারের একটা চরিত্রের কাজ হচ্ছে এখানে যুবকরা আছে আবার প্রবীণরাও আছে। এখানে কিন্তু প্রবীণরা কোনোভাবেই যুবকদের থেকে পিছিয়ে নেই।   
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তিনি বিশ্ববরেণ্য। তিনি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নন তবে খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার একটা প্রভাব রয়েছে। তিনি অলিম্পিকে উদ্বোধন করেন।
আনন্দ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা অভ্যুত্থানের পর দুটা বড় জাতীয় অর্জন পেয়েছি। একটা পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা টেস্ট সিরিজ জয় করেছি। আর সার্ফ অনূর্ধ্ব-২০ এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা আমাদের জন্য ভাগ্যই বলা যায়। কারণ আমরা বেশি কাজ করার সুযোগে পাইনি। কিন্তু এর ধারাবাহিকতা যেন থাকে সে জন্য আমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে কাজ করে যাব।

স্পোর্টসের জন্য আমরা কাজ করে যাব কিন্তু অংশগ্রহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোনে আসক্তিসহ বিভিন্ন দিকে আমরা চলে যাচ্ছি। তাই আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে অংশগ্রহণ করতে হবে খেলাধুলায়।
সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, দুই দলের খেলা দেখে আমি খুবই আনন্দিত। দুদলই ভালো খেলেছেন। রাবির ফুটবল টিমকে জয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শরীর চর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, রুয়েট ছাত্রকল্যাণের পরিচালকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় রাবি বনাম রুয়েটের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। সেখানে দুই শূন্য গোলে জয়লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

×