ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পাশে থাকার বার্তা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পাশে থাকার বার্তা

ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া দেশটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকার আলোচনা হবে খোলামনে।

সঠিক সংস্কার মেনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং  স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এলেও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ফের আলোচনায় এসেছেন।

নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন। শনিবার বাংলাদেশে এলেও মূল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রবিবার। বাংলাদেশে আসার আগে প্রতিনিধি দলটি তিনদিনের ভারত সফর করে।

এর আগে শনিবার সকাল ও বিকেলে পৃথক সময়ে তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন। বাংলাদেশ মার্কিন প্রতিনিধি দলকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা তুলে ধরবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতসহ প্রয়োজনীয় সবক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়ে যাওয়া  টাকা ফিরে আনার বিষয়েও দাবি জানাবে। 
প্রতিনিধি দলের সফরের প্রথম দিনে ঢাকার  মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচনে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত সহায়তা করতে পারে। 
শনিবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনার পর দূতাবাস জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার ও পরিবহন খাত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
এর আগে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিতে শনিবার সকালে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম। বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এলো। প্রতিনিধি দলের এই সফরে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, (এই মেয়াদে) প্রথম প্রতিনিধি দলের আগমন তার একটি বড় উদাহরণ। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করবে। এছাড়া পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থউপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি।

সফর নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশী কর্মকর্তারা। আলোচনার সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আলোচনা শুরুর আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যা আলোচনার স্বাভাবিকতাকে ক্ষুণœ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকার সবার সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্কের দিকে যেতে চায়। 
তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সফরে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু আমাদের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রচারে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন। ঢাকায় লু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন। 
পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের যেকোনো সফর সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। 
প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সুযোগ।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সহায়তা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরত যেতে সরকারের পদক্ষেপ এবং এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সহায়তা চাওয়ার সুযোগ হবে এই সফরে।
হুমায়ুন কবির বলেন, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এ সরকার গঠিত হয়েছে। বাইরের পৃথিবীর লোকজন কিন্তু বুঝতে পারছে না এটা কী করে হলো। আমাদের কাজ হবে মার্কিন দলকে বোঝানো, বাস্তব অবস্থাটা আসলে কী। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা কী ছিল এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা কী কী আশা করতে পারে, এটা উপস্থাপন করা জরুরি এবং এই সফর এর জন্য ভালো সুযোগ।

×