ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

বিভিন্ন জেলায় সমন্বয়কদের সঙ্গে নাগরিক মতবিনিময়

এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করেছি অন্য জনকে সুযোগ দেওয়ার জন্য নয়’

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করেছি অন্য জনকে সুযোগ দেওয়ার জন্য নয়’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বগুড়ায় শহীদ এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মতবিনিময় করেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, আমাদের আজকে এই টাঙ্গাইলে এসে শুনতে হয় আমার যে ভাই মারুফ হত্যা হয়েছে। আমার যে বোনকে অপদস্থ করা হয়েছে, আমার যে ভাইকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, আমার স্কুল-কলেজের ছোট ভাইবোনকে বিভিন্নভাবে হামলা ও রক্তাক্ত করা হয়েছে। সেই পুলিশটা নাকি এখনো আশপাশে  ঘোরাফেরা করে।

আমার ভাই যখন রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে। তখন সেই হামলাকারী কতিপয় পুলিশ কিভাবে উন্মুক্ত রাস্তায় ঘোরাফেরা করে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই ওই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, চাটুকার তেলবাজ,  তোষামতকারী যে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে। তারা যদি এখনো নিজেকে শুধরে না নেয়। তাদের ওই নেত্রী হাসিনার মতোই তাদের দেশত্যাগ করতে হবে।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে আমাদের রায় হিসেবে জানিয়ে দিতে চাই। এক ফ্যাসিস্টকে আমরা দেশছাড়া করেছি। অন্য ফেসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। কেউ যদি এখনো শয়নে স্বপনে স্মৃতিতে কিংবা ঘুমের মধ্যে চিন্তা করে আবারও ছাত্র-জনতাকে  ডোমিনেট করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে। তারা যেন ওই শেখ হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নিয়ে  নেয়।  
বৃহস্পতিবার বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ করে সমন্বয়ক সারজিস আলম আরও বলেন, আমরা চাই আগামীতে যে বাংলাদেশ হবে, সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব আপনারা দেবেন। আরও চাই ওই সংসদে গিয়ে আপনি একজন এমপি ও মন্ত্রী হবেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। আপনাকে ওই সংসদে একজন পলিসি মেকার হিসেবে যেতে হবে। কারণ দিন শেষে আপনি কি খান, কি করেন, কি পরেন, কিভাবে চলবেন, আপনার আইন কি, আপনার নিয়ম নীতি কি হবে, আপনার চলাফেরা কিভাবে হবে।

তার সব ডিসিশন পলিসি মেকিং হয় ওই সংসদ থেকে। তা হলে টাঙ্গাইলের এই মেধাবী তরুণ প্রজন্ম যদি ওই সংসদে প্রতিনিধিত্ব না করে তা হলে কারা করবে? সেই জায়গায় আজকের পর থেকে আপনাদের বাবা-মাকে বলে দিবেন আপনারা যেমন এতদিন স্বপ্ন দেখেছেন আপনার ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ম্যাজিস্ট্রেট হবে আজকের পর থেকে আপনারা স্বপ্ন দেখবেন আপনার ছেলে দেশের অন্যতম সেরা একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন রাজনীতিবিদ হতে হবে পলিসি মেকিং এর জন্য। অথবা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে হবে।
নীলফামারী : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কদের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার নীলফামারী সফর করেছেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন তারা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম তারিক, আবু সাইদ দুলাল, সুমন বসুনীয়া, রাসেল আহমেদ, আব্দুল মুনইম, তাসনিমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা ও প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করেন। 
বিকেলে জেলা শহরের শহীদ মিনার মাঠে শিক্ষার্থী ও জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।  বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, আমাদের আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সেই আন্দোলন দমানোর জন্য পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে ছাত্রদের বুকে গুলি করেছে। কেড়ে নিয়েছে তাজা প্রাণ। শেখ হাসিনার পদে পদে ভুল ছিল। তাই সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভুলের খেসারত দিচ্ছেন।

ঝিনাইদহ : গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ সভার আয়োজন করে। 
সভায়  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা বলেন, আমরা দাসত্ব থেকে মুক্তি চাই। আমরা দেশ ঘুরে দেখছি জনগণ কি চাই, কেমন দেশ চাই। আপনারা এসেছেন  কেমন বাংলাদেশ হবে তা শুনতে। আমরা সরকার নয়, সরকারের কেউ নয়, আমরা ছাত্র। বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হোক এটাই আমরা চাই।
বগুড়া অফিস :  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলননে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পরিবারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মত বিনিময় করেছেন।   বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বগুড়ায়  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহত পরিবারের সঙ্গে দুপুরে বৈষম্যবিরোধী  আন্দোলনের  সমন্বয়কারীরা কথা বলেন এবাং তাদের খোঁজ খবর নেন। মত বিনিময় সভায়   বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক  মো. মাহিন সরকার বলেন, সারা দেশে একটি শ্রেণী নিজেদের সমন্বয়কারী পরিচয় দিচ্ছেন।  

বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপ ছাত্রদের মাঝে বিভাজন  তৈরির চেষ্টা  করছে।  আমরা তা ঐক্য বদ্ধভাবে মোকাবিল করব। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। নিহত ও গুরুতর আহতদের পরিবারের  সমস্যার সামাধানে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
চাঁদপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিলেন। আমাদের অর্ধেক দায়িত্ব পালন হয়েছে। আমাদের বাকি দায়িত্ব অর্থাৎ যে দায়িত্বের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ভাইয়ের শহীদ হয়েছে, আমাদের অসংখ্য ভাই হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। যারা স্বপ্ন দেখেছিল এদেশ একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে।

এদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত হবে। এদেশের সরকার হবে জনতার সরকার। মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকবে। এদেশের পুলিশ প্রশাসন কোনো সরকারের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করবে না। এদেশের মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা থাকবে। এসব স্বপ্ন নিয়ে আমাদের যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তার ধারবাহিকতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিকের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি আন্দোলন ও দেশ রক্ষার সময় নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করি নাই। কখনো ভাবিনি দেশ স্বাধীন হলে আমরা কি পাব। ভেবেছি দেশ স্বাধীন হলে আমি কথা বলতে পারব। আমার মা, বোন, ভাই শান্তিতে ঘরে বসবাস করতে পারবে। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন নোয়খালীতে ভিন্ন মতের লোককে ভোট দেয়ার কারণে তৎকালীন সরকারি দলের বাহিনী কিভাবে গণধর্ষণ করেছিল। আমরা শুধু ধৈর্য ধরেছিলাম। আমরা সুযোগ পেয়েছি এবং সেটার জবাব দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু ফ্যাসিবাদী হাসিনাকে বিতাড়িত করা নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তারা যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো তৈরি করেছে, তা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া।
এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামো, ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দাঁড়াতে পারবে না। আমরা কাঠামোগত পদ্ধতিতে চলতে চাই। 
যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। যেখানে মানুষের ভোটাধিকার থাকবে এবং যে যার মতো করে মতামত প্রকাশ করতে পারবে। চাঁদপুরের সমন্বয়ক নাদিম পাটওয়ারী, জোবায়ে হোসেন, আব্দুল রহমান, হাসান মাহমুদসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

×