ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

বোয়ালমারী

ঠিকাদারের গাফিলতি: তিন বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাসের কাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর 

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঠিকাদারের গাফিলতি: তিন বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাসের কাজ

বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেনের নির্মাণাধীন ভবনে ফাটল

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ঠিকাদারের গাফিলতিতে তিন বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ। ৬০ ভাগ কাজ শেষ হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে বাধা দিলে ক্ষমতার দাপটে কাজ বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। 

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ফলে কাজ শেষের আগেই নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দেওয়ালে ধরেছে ফাটল। দেবে গেছে মেঝে, বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে চুয়ায় পানি। দীর্ঘ এতো দিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় গোয়ালঘরে গরু ছাগলের সঙ্গে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাটিতে ৬৮ জন অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ 'বীর নিবাসের' ১০টির কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। গুনবহা ইউনিয়নের হতদরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত হোসেনের নামে বরাদ্দ বীর নিবাস নির্মাণের জন্য একমাত্র থাকার ঘর ভেঙে ফেলা হয়। 

আর কোনো ঘর না থাকায় ঋণের টাকায় নির্মাণ করা গরু ছাগলের জন্য তৈরি 'গোয়াল ঘর'-এ কোনো মতে নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিন বছর ধরে একপাশে গরু-ছাগল আর অন্যপাশে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তিনি। 

তার নির্মিতব্য ঘরে ধরেছে ফাটল, দেবে গেছে মেঝে, অভিযোগ দিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে অনিশ্চিত গৃহনির্মাণ নিয়ে এখন হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

শওকত হোসেনের মতো বিপাকে পড়েছেন গুনবহা ইউনিয়নের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েনউদ্দিনের পরিবার। তিন বছর ধরে প্রতিবেশীর একবাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদ খানের নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের কাজ হয়নি একেবারেই মাটি খুঁড়ে ভিত তৈরি করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে বাধা দিলে সে কাজ ফেলে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এ রকম দশটি বীর নিবাসে কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মেসার্স নাহার বিল্ডার্স এবং মেসার্স তানিম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।

জাতির সূর্য সন্তানদের আবাসন নির্মাণে নিম্নমানের কাজ, চরম গাফিলতির অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভয়ভীতি দেখায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে। সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলেও নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। 

গুনবহা গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদ খানের ছেলে মোহাম্মদ সজীব খান বলেন, আমাদের বীর নিবাসের কাজ তিন বছর ধরে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানানো হলেও আজও পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি।

ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত হোসেন বলেন, তিন বছর অপেক্ষার করছি। বার বার বললেও তারা আমার ঘরটি করে দিচ্ছেনা। ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে,নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার থাকার মতো কোন ঘর নেই। গরু-ছাগলের ঘরে কোনমতে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এভাবে থাকা যায় না। 

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার নাহার বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী সিহাব ও ঠিকাদার প্রান্তকে একাধিকবার ফোন করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এইচ এম মাজহানুর রহমান বলেন, নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে সংশ্লিষ্ট দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী তানভীর হাসান বলেন,উপজেলায় মোট ৬৮ জন অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের মধ্যে ১০টির কাজ শেষ হয়নি। দ্রুত কাজ শেষসহ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জোর দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার। 

অভিযোগের পর ভুক্তভোগী ও ঠিকাদারদের নিয়ে মিটিং করার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। 

এসআর

×