ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে আগর চাষ

শখের বশে নির্যাস সংগ্রহ শুরু হাতছানি বিশ্ববাজারের

এস এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শখের বশে নির্যাস সংগ্রহ শুরু হাতছানি বিশ্ববাজারের

ঠাকুরগাঁওয়ের ইয়াকুবপুর গ্রামে গৃহবধূ রোজিনা আক্তারের আগর গাছের বাগান

সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার। শখের বশবর্তী হয়ে সমতল ভূমিতে আগর চাষ করেছিলেন। পরে জৈব পদ্ধতিতে আগর গাছের নির্যাস সংগ্রহ করে সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষ শুরু করেন। জেলায় তিনিই প্রথম সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষ করছেন।  
রোজিনার স্বামী শরিফ আহমেদ ২০১০ সালে শখের বশে সিলেট  থেকে শতাধিক আগরের চারা সংগ্রহ করে ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ির পাশে সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাগান গড়ে তোলেন। পরে স্বামীর অসুস্থতায় রোজিনা বেগম সেইসব গাছের দেখভাল শুরু করেন। এখন তার বাগানে চার শতাধিক আগরগাছ রয়েছে। আগর চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি আগর গাছের চারা উৎপাদনও শুরু করেছেন।

সাধারণত আগরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে লোহার পেরেক মেরে ও ড্রিল করে ক্ষত তৈরি করে রাসায়নিক কীট ঢোকানো হয়। এতে ওই স্থানে ছত্রাক তৈরি হয় যা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।  রোজিনার দাবি, এ পদ্ধতিতে আগরের মান ঠিক থাকে না। রসে আয়রন ও রাসায়নিক মিশ্রণ পাওয়া যায়। তাই তিনি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছত্রাক তৈরি করেন। এরপর ওই ছত্রাক বাঁশের কাঠির মাধ্যমে কম ছিদ্র করে আগর গাছের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। পরে এ ছত্রাকের যত বংশবৃদ্ধি হয়, ততই আগরের নির্যাস পাওয়া যায়। 
রোজিনা আরও বলেন, অন্য গাছের তুলনায় আগর গাছের বাগান করা সহজ। খরচ তুলনামূলক কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। আগর গাছের নির্যাস থেকে মূল্যবান সুগন্ধি ও তেল পাওয়া যায়। যা থেকে আতর, আগরবাতি, বডি স্প্রেসহ বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পণ্য তৈরি করা হয়। বর্তমান বাজারে এক কেজি আগর আতরের দাম ৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। আগর গাছের কাঠ ওষুধ কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।

উত্তরবঙ্গে আমরাই প্রথম আগর গাছ থেকে আগর তেল উৎপাদন শুরু করেছি। সম্প্রতি ‘ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় আগর তেল উৎপাদন করার জন্য মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি আমরা এই তেল রপ্তানি করতে পারি তাহলে উত্তরবঙ্গে নতুন এক অর্থনীতির সম্ভাবনা তৈরি হবে।   
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও ছাড়াও দিনাজপুর, পঞ্চগড়েও আগরের চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু আগর গাছ থেকে তেল উৎপাদনের যে মেশিন সেটি না থাকার ফলেই সেই মূল্যবান গাছ কোনো কাজে আসছে না। আমাদের এই মেশিনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আমরা আগর গাছ থেকে আগর তেল উৎপাদন করছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা বাইরের দেশে এই তেল রপ্তানি করতে পারব। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে খুব সহজেই আমাদের নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তার পাশাপাশি আমাদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর আতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় আগর চাষ করে বদলে যেতে পারে এ জেলার মানুষের ভাগ্য। আগর চাষে আগ্রহীদের সকল ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

×