শ্রীনগর ইউনিয়নের আব্দুল্লার চরসহ ভেলুয়ার চর এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাতের আঁধারে চলছে মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন। সম্প্রতি দুটি ড্রেজারসহ ৪ জনকে আটক ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী দস্যু চক্রকে। ইজারা দেওয়া বালু মহালের সীমানা কাতলার চর মৌজা ছাড়িয়ে রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মাঝের চর, শ্রীনগর ইউনিয়নের আব্দুল্লার চরসহ ভেলুয়ার চর এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তৎপর হয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। গত ৩১ আগস্ট উপজেলার মেঘনা নদীর আব্দুল্লাহচর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
বালু মহলের নির্ধারিত স্থান থেকে বাইরে গিয়ে অবৈধ চুম্বক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪ বালু দস্যুকে আটক করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাতলারচর মৌজার বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
নিষেধাজ্ঞার ফলে দিনের বেলায় বালু মহাল ও অন্যান্য স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতের আধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অন্তত ২০টি অবৈধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়।
আর শত শত বালুবাহী বলগেট (বালু বোঝাই স্টিলের নৌকা) দিয়ে লুট করা বালু অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ড্রেজার প্রতি ২০-২৫ মিনিটে এক বলগেট বালু ভর্তি করতে পারে। প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার বালু তোলা হয়।
অস্ত্রধারী বালুদস্যুরা রাতভর চালায় মেঘনা নদীতে এ তা-ব। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের ভয়ে এলাকার কেউ তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, বিগত সরকারের আমলে রায়পুরার আওয়ামী লীগ এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নিয়োজিত লোকজন প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা নিয়ে বালু উত্তোলন করত। ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে অনেকটা বাধ্য হয়ে হাত মিলিয়ে চলত। সরকার পতনের পর প্র্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিছুটা সচল হয়।
অবৈধ বালু উত্তোলন ব্যবস্থার গডফাদার পরিবর্তন হয়ে যায়। স্থানীয় বিএনপি নেতা দাবিদার আব্দুল্লাচর এলকার মনির, আফজাল, আবুল মেম্বার, চানপুর এলাকার মামুন মেম্বার, পলাশতলী এলাকার সাদীর ব্যাপারী, সাহারখোলা এলাকার সোহরাব মেম্বার, আবদুল লতিফের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
নদীর তীরবর্তী লোকালয় থেকে কাটিং ড্রেজারের পরিবর্তে নিষিদ্ধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বর্ষার পানি শুকিয়ে গেলে শুরু হয় ব্যাপক ভাঙন। ইতোপূর্বে মেঘনার ভাঙনে নদীর তীরবর্তী চানপুর ইউনিয়নের সওদাগর কান্দি, মাঝের, শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতলী, আব্দুল্লাহর চর, বাঘাই কান্দি, ফকিরের চর, ভেলুয়ারচর, চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের ভাটখলা, চরমধুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ব্যাপক ভাঙনে লোকালয় ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ইজারা নেওয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই অবৈধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে নরসিংদী শহরের ইজারাদার মেসার্স আশরাফ হোসেন সরকার ট্রেডার্স। অথচ চম্বুক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কোনো নিয়মই নেই। সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে ইজারাদারের পোষাবে না। তাই অধিক বালু উত্তোলন করতে ইজারাদার স্থানীয় গডফাদারদের সহায়তায় যত্রতত্র ড্রেজার লাগিয়ে অবাধে লোকালয় থেকে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু লুট করা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৮ কোটি টাকা দিয়ে কাতলার চর বালু মহালটি ইজারা নেয় মেসার্স আশরাফ ট্রেডার্স। কাটিং ড্রেজার দিয়ে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করার শর্তে দেওয়া হয় ইজারা। কিন্তু কোনো শর্তের তোয়াক্কা করছে না ইজারাদার। নদী ভাঙন রোধে সিভিল প্র্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে স্থানীয়রা।