তিস্তার ভাঙনের মুখে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খাঁ প্রাইমারি স্কুল
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম। তাদের ঘরবাড়ি জমা-জমি আজ তিস্তা নদীর ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এখন থাকারও জায়গা নেই। তার স্বামী ছমির উদ্দিন জানান, তার জীবনেই তিনবার ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় তাদের বাঁধের রাস্তা অথবা মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হবে এখন। গত ৭ দিন থেকে রাস্তার ওপর একটি পলিথিন টাঙিয়ে রাত কাটাচ্ছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনে এই এলাকার সরিষাবাড়ি শ্যালো ঘাট থেকে পূর্বে চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইদিকে জিওব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যেভাবে নদী ভাঙছে কয়েকদিনের মধ্যে আরও ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি ও বাগান বিলীন হয়ে যাবে। এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল আলম জানালেন, ‘গত ১৫ দিনে এখানে ৯টি বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের মুখে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি।’
ভাঙন কবলিত মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছে। তিস্তা নদীর ভাঙন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। গ্রামের ফসলি জমিন চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। কৃষক হামিদ আলী জানান, ‘আমার এক একর আবাদি জমিন নদীগর্ভে চলে গেছে। আমার আর কোনো জমি নাই। ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন পথে বসার মতো অবস্থা।’ ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, ৬/৭টা বাড়ি ভেঙেছে মাত্র। এটা এ অঞ্চলের স্বাভাবিক ঘটনা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, বাজেট সংকটের কারণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে পারছি না। তবে স্কুলটি রক্ষায় আমরা ইতোমধ্যে তিনশ জিওব্যাগ ফেলেছি। আরও জিও ব্যাগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে।
ফেনী নদীতে কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন
নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে জানান, মীরসরাইয়ে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন ফেনী নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের পর বছর ফেনী নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শতশত বাড়ি ও হাজার হাজার একর কৃষিজমি। সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় অতিরিক্ত পানির চাপ ও ¯্রােতে নদীর মীরসরাই অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের আমলীঘাট থেকে শুভপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মোল্লা বাড়ি, তিলকের খাল, চৌধুরী বাড়ির প্রায় অর্ধশত বসতঘর ভাঙনের কবলে পড়ছে। ফেনীর ছাগলনাইয়া অংশে নতুন চর জাগায় এ অংশে ¯্রােত তীব্র হচ্ছে। এতে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী ও ধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
অলিনগর গ্রামের মো. জামাল জানান, ভাঙনের পর আমাদের ভাগ্য গড়া হবে কিনা সেটি কেউ বলতে পারেন না। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আরেকটি সংকটে পড়েছি। বিবি আয়েশা বলেন, নদী ভিটেমাটি ভাসিয়ে নিলে কোথায় আশ্রয় হবে জানি না।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন বলেন, পানি নেমে যাওয়ায় নদীভাঙন মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মীরসরাই উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনকে জানানো হবে। এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।