ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

দিলীপ আগরওয়ালা তিনদিনের রিমান্ডে

অর্থপাচার জালিয়াতি ও  হত্যার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অর্থপাচার জালিয়াতি ও  হত্যার অভিযোগ

দিলীপ আগরওয়ালা তিনদিনের রিমান্ডে

রাজধানীর বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) ২৮নং আদালতের বিচারক মো. মেহেদী হাসান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন তাকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. সাদেক। এ সময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১।
সম্প্রতি বাড্ডা থানায় মো. শাহাদাত হোসেন খান বাদী হয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গত ২৩ আগস্ট রুজু করা হয়। মামলায় দিলীপ কুমারের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যায় মদত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার ২০নং আসামি তিনি।

এদিকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়ে ডায়মন্ডের বদলে উন্নতমানের ‘কাঁচের টুকরো’ বিক্রি এবং স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। 
মঙ্গলবার সিআইডির মিডিয়া বিভাগ জানায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে দুবাই-সিঙ্গাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় ৩টি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পাওয়ায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম টিমের মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু হয়।
সিআইডির পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। 
উল্লেখ্য, দেশের শীর্ষ জুয়েলারি চোরাকারবারি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ডের নামে তিনি ভেজাল-নকল জুয়েলারি বিক্রি করে ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছেন।  ভেজাল-নকল সোনা ও ডায়মন্ড বাণিজ্য করে দুই দশকের ব্যবধানে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হন ও বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে এই প্রতারক ডায়মন্ড ব্যবসায়ী।

বিদেশে পাচারকৃত টাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় খুলেছেন একাধিক জুয়েলারি শো-রুম। এই দিলীপ কুমার আগরওয়ালা একজন অশিক্ষিত, একেবারেই সাধারণ ও নিম্নশ্রেণির ব্যবসায়ী হিসেবে জুয়েলারি ব্যবসায় আসেন। তিনি তার কর্মজীবনের শুরু থেকেই টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রকার জালিয়াতিমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার পরিবার বিগত কোনো সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও বিগত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে এমপি হবার চেষ্টা করেন। ব্যাংকের পরিচালক হয়ে তিনি ব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকার উপরে কৌশলে ঋণ করে বিদেশে পাচারসহ গুলশানের অভিজাত ২টি ভবনে কিনেছেন ৭টি ফ্লোর। এ ছাডাও বিতর্কিত মডেল পিয়াসার ও পাপিয়ার সঙ্গে রয়েছে তার মাদকের নেটওয়ার্ক।

নারীঘটিত কারণে তার এলাকায় ও অনেক কেলেঙ্কারি রয়েছে। 
রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড বিগত ১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে আসে। এর পর থেকেই ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে নিয়ে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশে ডায়মন্ডের খনি নেই, আমদানিও হয় না, তবু থেমে নেই ডায়মন্ডের বেচাকেনা। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা চোরাপথে আনা ভেজাল ডায়মন্ডের ব্যবসা করছেন গত দেড় দশক ধরে।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড নামে দিলীপ আগরওয়ালার ২৮টি শোরুম রয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশে। এসব শোরুমে দিনে বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ কোটি টাকার ডায়মন্ড। কোথা থেকে কিভাবে ডায়মন্ড আসছে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে বিক্রয়কর্মীরা। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডায়মন্ড ও ডায়মন্ডের গহনা আমদানি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার।

এরপর দেশে ডায়মন্ডের আমদানি আর হয়নি বললেই চলে। এর বাইরে শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য ২০১৯ ও ২০২০ সালে তিনটি চালান ছাড়া কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড আমদানি করেনি। ২০২১ সালে অমসৃণ ডায়মন্ড আমদানি করে একমাত্র কাটিং ও পলিশিং কারখানা বেঙ্গল ডায়মন্ড লিমিটেড। কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড আমদানি করে ছোট একটি চালান।
২০২২ সালে দুটি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড আমদানি করে। শিল্পে ব্যবহারের জন্য বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ আমদানি করে একটি চালান। সাড়ে ৫ হাজার ডলার ঘোষণায় আরেকটি চালান আমদানি করে ঢাকার জুয়েলারি হাউস। অর্থাৎ চার বছরে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকার ডায়মন্ড আমদানি হয়েছে। আমদানি না হলেও দেশে ডায়মন্ডের বাজার দিন দিন বড় হয়েছে বলেই তথ্য দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

×