কুড়িগ্রামের রৌমারীর পাটাধোয়া বিলে ফুটেছে শাপলা ফুল। যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা নকশিকাঁথা
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। প্রকৃতিকে ভিন্ন রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে রং-তুলির আঁচড়ে। ব্রহ্মপুত্র নদের পারে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের পশ্চিম মাদার টিলা গ্রামের পাটাধোয়া শাপলা বিলে বর্তমানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড়।
বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। লাল শাপলা আর সবুজের সমারোহের মাঝে সাদা বক আর দেশীয় নানা জাতের জানা অজানা পাখির কলকাকলিতে ভরে যায় পুরো বিল এলাকা। বিস্তীর্ণ পাটাধোয়া বিলটি দূর থেকে চোখে পড়ে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরও গাঢ় হয়ে দেখা দেয় বাহারি সৌন্দর্যে। এ যেন সূর্যের আভাকেও হার মানায়।
বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্ম ভরা শত সহ¯্র লাল শাপলা যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। ভোরের সূর্যের আলোতে ঝলমলিয়ে ওঠে। সকালে মনোমুগ্ধ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, এক সময় স্থানীয় কৃষকরা বিলের আশপাশের জমিতে পাট চাষ করতেন। আর এই বিলে পাট ধুয়ে সোনালি আঁশ বের করত। এ কারণে এই বিলের নাম হয়েছে পাটাধোয়া বিল। প্রায় ৫ বছর হলো এ বিলে বর্ষার শেষে পানি নেমে যাওয়ার পর লাল শাপলা ফুল ফুটতে শুরু করে।
প্রতিবছর জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে এই শাপলা ফুল। প্রায় ১০ একর জলাভূমির ওপর লাল শাপলা বিলটি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসে এই বিলে। মুগ্ধ হয় লাল শাপলা আর পাখি দেখে। এ বিলে ভ্রমণের জন্য রয়েছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। পর্যটকরা পুরো বিল ঘুরে দেখে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। মিলনমেলায় হারিয়ে যায় শিশু, কিশোর, যুবক, নারী ও পুরুষ।
অটো ভ্যানচালক আামিনুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এলাকার মানুষ সকাল বিকেল অটোভ্যান যোগে এ শাপলা বিল দেখতে আসে। এতে করে আমাদেরও বেশ আয় হয়। তাদের মতে, সরকার যদি বিলের পাশে বসার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে মানুষের আরও ভালো লাগত।
গান গেয়ে বিনোদন দেন এমন এক ব্যতিক্রম নৌকার মাঝি রোনজু হোসাইন জানান, প্রতি বছর একই সময় এই পাটাধোয়া শাপলা বিলে অনেক ফুল ফোটে। আমার নৌকায় ঘুরতে আসা মানুষজন বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। এতে দিনে আয় হয় ৪ থেকে ৫শ টাকা।
লাল শাপলা দেখতে আসা তানভীর আহমেদ, ফিরোজ মিয়া, সুমন মিয়া জানান, দারুণ এক দৃশ্য। সমস্ত বিলে লাল শাপলা ফুটে আছে। নানা জাতের পাখি বিলে এসে পড়েছে। পরিবার নিয়ে কিভাবে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারিনি। ঘুরতে আসা যুবক ইউনুস আলী জানান, কিছু মানুষ অযাচিতভাবে শাপলা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এটা একদম অনুচিত। মানুষের সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
স্থানীয় এলাকাবাসী মোত্তালেব হোসেন, আমীর আলী জানান, আমাদের এলাকা এমনি অবহেলিত। এই পাটাধোয়া শাপলা বিলের কারণে অনেক জেলা থেকে ফুল দেখতে আসে মানুষ। সরকার যদি একটু সহায়তা করত তাহলে আরও পর্যটক আসত। এতে স্থানীয় মানুষদের নানাভাবে আয় হতো। প্রায় পাঁচ বছর থেকে এই বিলে প্রচুর লাল শাপলা ফুল ফোটে। বর্তমানে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত শত মানুষের সমাগম হয় এখানে।