ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

ক্ষমতার পালা বদল হলেও যমুনা সার কারখানায় চলছেই চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর 

প্রকাশিত: ১৫:১০, ৩১ আগস্ট ২০২৪

ক্ষমতার পালা বদল হলেও যমুনা সার কারখানায় চলছেই চাঁদাবাজি

সার কারখানা। ছবি: জনকণ্ঠ

রাষ্ট্র ক্ষমতার পালা বদল হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে দেশ পরিচালিত হলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় থেমে নেই চাঁদাবাজি। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি দলীয় বিবদমান দুইপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে মাঝে মধ্যেই। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানায় বিদেশ থেকে আমদানি ও ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সার, যমুনা সার কারখানায় আনলোড-লোড কাজে দখলদারিত্ব এবং চাঁদাবাজি নিয়ে বিএনপির বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে শুক্রবার বেলা ২টা দিকে কারখানার গেইটে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত সাতজন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে এ চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল বলেও জানা যায়। 

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট থেকে এ চাঁদা হাতবদল হয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চান মিয়া চানু ও পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির আহব্বায়ক মামুনুর রশিদের নির্দেশে অংকন ও উজ্জ্বল নামের ব্যক্তিদের মাধ্যমে শ্রমিকদের বকশিসের নামে গাড়ি প্রতি ৬৫০ টাকা হারে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল। বিভিন্ন সময় ঠিকাদাররা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সার কারখানাতে আনলোড করা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এ বিষয়ে সার পরিহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মা ট্রেডার্সের স্বত্বাধীকারী  বিএনপি নেতা মো. আনুয়ারুল ইসলাম বাবুল জানান, বর্তমানে যমুনা সারকারখানায় আমার প্রতিষ্ঠানসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে সার পরিবহন করে আসছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে এ কারখানায় প্রতি গাড়ি সার আনলোডের সময় শ্রমিকদের বকশিসের নামে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সম্প্রতি আওয়ামী সরকার পদত্যাগের পর হঠাৎ করেই গাড়িপ্রতি ৬৫০ টাকা করে চাঁদা দাবি করে চান মিয়া চানু ও মামুনুর রশিদ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ চাঁদা না দিলে মাল আনলোড বা যমুনার ভেতরে গাড়ি ঢুকতে দিবে না বলে হুমকি দেয় তারা। 

পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫০ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার সম্মতিতে আনলোড শুরু হলেও শুক্রবার আবারও ৬৫০ টাকা করে আদায় করছে তারা। এর প্রতিবাদে মা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি সার ব্যবসায়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সাইদুর ইসলাম তোতার নেতৃত্বে একদল বিএনপিকর্মী প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজচক্র প্রতিবাদী বিএনপিকর্মীদের ওপর হামলা করে। এতে বিএনপিকর্মী বজলু, খোকন, মুকুল, জুলহাস, মুসা, শাহিন ও ফারুক আহত হন। 

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকেরা জানান, শ্রমিক বকশিসের নামে গাড়িপ্রতি ৬৫০ টাকা চাঁদার ভাগ থেকে আমরা শ্রমিকেরা কোন টাকা পাই না। এই টাকা অংকন ও উজ্জ্বল বিএনপির দাপট দেখিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরও বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০টি গাড়ি আনলোড হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৬৫ হাজার টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন বিএনপির আহব্বায়ক মামুনুর রশিদ বলেন, আমার দলের কোন লোক সেখানে যায় না। আর সার আনলোড সেটা শ্রমিকদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখনও কারখানার লোড-আনলোডের ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলামের হাতে। সেখানে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের যাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। 

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে সার কারখানা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। এটি কারখানার বাইরের বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই।

এসআর

×