ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:১৯, ৩০ আগস্ট ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মেট্রো চালু হওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন যাত্রীরা

মেট্রোরেল কতটা প্রয়োজন তা হাড়ে হাড়ে টের পেল রাজধানীবাসী। সবচেয়ে কার্যকর আধুনিক এই গণপরিবহন টানা ৩৭ দিন বন্ধ ছিল। বন্ধের সময়টাতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। লক্কড়ঝক্কড় বাসের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছেন তারা। তার পরও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। বিশেষ করে উত্তরা বা মিরপুর থেকে যারা ট্রেনে চড়তেন তাদের প্রতিদিনের জীবন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। যানজট বেড়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছিল শহর। সবাই তাই দিন গুনছিলেন, কবে চালু হবে মেট্রো।

অবশেষে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে যাত্রী পরিবহন। বর্তমানে আগের মতোই স্বাভাবিক সেবা অব্যাহত আছে। ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে চাপ কমায় কমেছে যানজটও। যাত্রীরাও দারুণ খুশি। একেবারে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন তারা। বৃহস্পতিবার মেট্রোতে করে ফার্মগেট থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত আসতে আসতে যাত্রীদের অনেক কথাই শোনার সুযোগ হয়েছে।

তুহিন নামের এক যাত্রী অপর যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘যাই বলেন ভাই, মেট্রোরেলটা কিন্তু আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া। কত মানুষ উপকার পাচ্ছে দেখেন!’ ‘গত কিছুদিন চলেনি তাতে জীবনটা কয়লা হয়ে গিয়েছিল’, যোগ করেন আরেক যাত্রী। বলেন, ‘এখন মিরপুর থেকে মতিঝিল আসছি কয়েক মিনিটে। আর মেট্রো যে ক’দিন বন্ধ ছিল সে কদিন এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছি।’

যাতায়াতে সময় বেশি লাগায় পরিবারে, এমনকি অফিসে সময় কম দিতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। অবশ্য মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন এখনো বন্ধ। গত ১৮ এবং ১৯ জুলাইয়ের তা-বে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল স্টেশন দুটি। সেই ক্ষত আজও সারানো যায়নি। ফলে এই দুই স্টেশনের যাত্রীরা আশপাশের অন্য স্টেশন ব্যবহার করছেন। এক যাত্রী তাই রসিকতা করতে ছাড়লেন না। বললেন, মিরপুর ১০ এবং কাজীপাড়ার যাত্রীরা তো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী সরকারের উচিত দ্রুত এই বৈষম্য দূর করা।  
ক্র্যাক প্লাটুন গেরিলাদের স্মরণ ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় দুর্ধর্ষ অভিযান চালিয়েছিলেন ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা। আরবান গেরিলাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। এক পর্যায়ে তরুণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে আদা জল খেয়ে নামে শত্রুরা। রাজাকারদের সহায়তায় অভিযান শুরু করে তারা।

একাত্তরের ২৯ আগস্ট রাতে গেরিলাদের ধরতে মোট ৪৪টি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। আটক করা হয়েছিল ৩০-৩৫ জনের মতো গেরিলা ও তাদের স্বজনকে। পাকি মেজর সরফরাজ ও ক্যাপ্টেন বোখারির নেতৃত্বে বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। একইভাবে ৩০ আগস্ট ভোরে রাজারবাগের ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডের বাড়িতে রেইড চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আটক করে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক আলভী, লিনু বিল্লাহ, দিনু বিল্লাহ, নুহে আলম বিল্লাহ, খাইরুল আলম বিল্লাসহ মোট ১২ জনকে।

আটকের পর ভয়ংকর নির্যাতন চালানো হয় গেরিলাদের ওপর। নির্যাতনের যে বর্ণনা পরবর্তী সময়ে পাওয়া গিয়েছিল তা শুনে আজও মানবিক মানুষের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। দিনের পর দিন চলা  নির্যাতনে গেরিলাদের অনেকেই শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শাফী ইমাম রুমী, বদিউল আলম বদি, মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদ, আবদুল হালিম জুয়েল, সৈয়দ হাফিজুর রহমান, আলতাফ মাহমুদ, আবু বকর, আবুল বাশার, আবুল বাসার, আবদুল্লাহিল বাকী, সেকান্দার হায়াত খানসহ মোট ১১ জন গেরিলা।

কার কবে মৃত্যু হয়েছিল সেটি নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও, ধরে নিয়ে যাওয়ার তারিখটি সবার জানা। আগস্টের ২৯ এবং ৩০। ফলে এই দুটি দিনের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মানুষ। এবারও করেছে। ফেসবুকজুড়েই ছিল তরুণ যোদ্ধাদের ছবি। তাঁদের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে গভীর আবেগের সঙ্গে। ঢাকার ইতিহাসকে গর্বিত করা এই বীরদের প্রতি আমাদেরও থাকল অতল শ্রদ্ধা।

×