ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এখন বিএনপির দখলে 

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৯ আগস্ট ২০২৪

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এখন বিএনপির দখলে 

শিমুলিয়া ঘাট। ছবি: জনকণ্ঠ

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় শিমুলিয়া ঘাট দখলে নিয়ে জোর করে টাকা তুলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ নেতার কোটি টাকায় ইজারা নেওয়া ঘাটটি উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জনির নেতৃত্বে অনুসারীরা দখলবাজির এ কাজ করছেন। 

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে শিমুলিয়া ফেরিঘাটটি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে লঞ্চ, ফেরি, স্পিড বোট ও ট্রলার দিয়ে যাত্রী পারাপারের জন্য ব্যবহার হতো।সেতু উদ্বোধনের পর ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণে আসেন। উপভোগ করেন পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য। গ্রহণ করেন পদ্মার ইলিশের স্বাদ। 

চলতি অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে লৌহজং উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ঘাটের ইজারা নেন। সেই সঙ্গে আলাদা করে ৮ লাখ টাকায় এখানকার দুটি ট্রলার ঘাট এবং ১০ লাখ টাকায় একটি মাছঘাটেরও ইজারা নেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। 

এই সুযোগে কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জনির নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের সমন্বিত একটি দল ঘাটের সব ব্যবসা তাদের দখলে নেন।

গত ১৬ আগস্ট ঘাটের পার্কিং, ট্রলার ঘাট, দোকান, রেস্তোরাঁ থেকে কাউসার ও জনির লোকজন টাকা তুলতে শুরু করেন। পরদিন ঘাটের দায়িত্বে থাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শেখ মেহেদি হাসানকে বিএনপির ওই দলটি মারধর করে ঘাট থেকে বের করে দেয়। 

পরে কৃষকলীগ নেতা ইজারাদার সুলতান মোল্লা, বিএনপি নেতা কাউসার তালুকদারের সঙ্গে সমঝোতায় আসেন। মোট আয়ের ১৬ ভাগের ৬ ভাগ কাউসার তালুকদারকে দিতে রাজি হন তিনি। তবে কাউসার তালুকদার শর্ত দেন যে, তার ছেলেরা ঘাটের টাকা তুলবে।

শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের পার্কিং মাঠের প্রবেশমুখে কয়েকজন ব্যক্তি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার সহ অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে টাকা তুলছেন। 

স্থানীয়রা জানান, তারা কাউসার তালুকদার ও আনোয়ার হোসেন জনির লোকজন। দিনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন তারা।

ঘাটের দোকানিরা জানান, প্রতিদিন পার্কিং এরিয়া থেকে ৩০ হাজার টাকা তোলা হয়। এ ছাড়া মাঠে ১৫টা বড় খাবার হোটেল এবং আড়াইশ বিভিন্ন পণ্যের ছোট দোকান রয়েছে।

এসবের মধ্যে হোটেল থেকে প্রতিদিন দুই হাজার এবং ছোট দোকান থেকে ২৫০ টাকা করে ভাড়া তোলা হচ্ছে। টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছে বিএনপি নেতা জনাব কাউসারের অনুসারী কুমারভোগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহান মৃধা, ছাত্রদল নেতা মিলন ঢালী, ইউনিয়নটির ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ইলিয়াস মাদবর ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা অনিক হোসেন। 

মাছঘাট থেকে টাকা তুলছেন লৌহজং উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সোহাগ মৃধা। 

ট্রলার ঘাট থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা পারভেজ খান এবং বাসস্ট্যান্ড দখল করে শ্রমিক দলের নেতা জাকির হোসেন টাকা আদায় করছেন।

শিমুলিয়া ঘাটের ইজারাদার উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মোল্লা বলেন, ‘মাছঘাট, ট্রলার ঘাট, শিমুলিয়া ঘাট সব কিছুই কাউসার তালুকদার ও তার লোকজনের দখলে রয়েছে। আমরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। অথচ তারা বিনিয়োগ ছাড়াই ৩০ ভাগের বেশি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তাদের লোকজন দিয়ে টাকা তুলছেন। তারা এখনো আমাদের ভাগের টাকা দেননি।’

সোহান মৃধা বলেন, ‘আমি একদিন ঘাটে গিয়েছিলাম। কাউসার তালুকদার চারজনকে ঘাটের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি এগুলোর মধ্যে নেই।’

ঘাট দখলের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপি নেতা কাউসার তালুকদার বলেন, ‘কিছু ছাত্র, পোলাপান ঘাটে এসে ইজারাদারদের বিরক্ত করছিল। ব্যাপারটি নিয়ে ইজারাদার ও ইউএনও সাহেবের সঙ্গে বসেছিলাম। ইউএনও সাহেব সরকারি ইজারা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের দেখে রাখতে বলেছেন। টাকা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অন্যায় কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা বারবার ব্রিফিং করে বলে দিয়েছি, আমাদের পার্টির কোনো নেতাকর্মী যদি এমন অপকর্ম করে সেটি আমরা বরদাস্ত করব না। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকার পতনের কয়েক দিন পর ঘাটের বিষয় নিয়ে কাউসার সাহেব ও তার লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি এ ব্যাপারে তাদের পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’

এসআর

×