মীরসরাইয়ে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে
টানা ভারি বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। অতিবৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আকস্মিক বন্যায় ভাসছে ১১ জেলা। বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ১৮ জনের। বৃষ্টি থামায় কিছু স্থান থেকে নামছে বানের পানি।
এখনো ৭টি নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপরে। তবে পাঁচ জেলার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শনিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টি কমে এসেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। সেখানে রয়েছে খাবার ও সুপেয় পানি সংকট এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ জনের। বন্যায় বিপর্যস্ত নোয়াখালীর জনজীবন। খাগড়াছড়িতে ভেঙে গেছে ব্রিজ ও পাহাড় ধসে অচল হয়েছে পড়েছে সড়ক। এ ছাড়া তিন দিনেও মেরামত হয়নি খুলনার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
ভয়াবহ বন্যার কবলে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, মীরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় শুরু হয়েছে সুপেয় পানি, খাবার এবং ওষুধের সংকট। একইসঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামে পানিবন্দি বাসিন্দাদেরও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ তিন উপজেলায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬।
চট্টগ্রামের দুই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
ফটিকছড়ির হালদা, ধুরুংসহ ৩০ স্থানে পানি ঢুকে প্লাবিত সব ইউনিয়ন। সেখানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব মানুষের খাদ্য সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে। কয়েকটি জায়গায় পানি নামতে শুরু করলেও সব ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। একইসঙ্গে বয়স্ক ও শিশুদের দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। খাবার সংকট গ্রামগুলোতে।
ত্রাণ নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সংগঠন উপজেলা সদরে বিতরণ করে ফিরলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের বাসিন্দারা এখনো ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি। যার ফলে সেখানে এখনো খাবার সংকট।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ফটিকছড়িতে ৫০ টন চাল এবং শুকনো খাবারের জন্য সরকারিভাবে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থাও ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু কিছু জায়গায় ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হলেও বেশকিছু স্থানে যাওয়া যাচ্ছে না। নৌকা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চললেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বানের পানি একমুখী।
যার ফলে নৌকা দিয়ে সব স্থানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে উত্তর ফটিকছড়ির বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট এবং ভূজপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নাজিরহাট, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়িতে হালদার পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।
অপরদিকে হাটহাজারীতেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চট্টগ্রামে শনিবার কয়েকটি স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। কিন্তু হালদা নদী, অন্যান্য শাখা খাল ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন। হাটহাজারীতে বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যা দুর্গতদের নৌকা নিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করেছে। তবে ফটিকছড়ির অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রামে ফটিকছড়ি, মীরসরাই, হাটহাজারীর বেশিরভাগ বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকটে পড়েছেন। বন্যায় নলকূপ, সুপেয় পানির অন্যান্য উৎস তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের এ তিন উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং স্যালাইন। বেশিরভাগ ত্রাণ বিতরণকারী মুড়ি ও বিস্কুট নিয়ে গেলেও খাবার পানি এবং ওরাল স্যালাইনের সংকট বলছেন বাসিন্দারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা কবলিতদের ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানিবন্দি থাকা অনেক মানুষ ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া নবজাতক, শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলছেন চিকিৎসকরা। যার ফলে এখন সবচেয়ে বড় কাজ হলো উদ্ধার তৎপরতা ও খাদ্য বিতরণ। চট্টগ্রাদের এ তিন উপজেলায় অতি দ্রুত সুপেয় পানি, খাদ্য এবং ওষুধ সংকটের সমাধান না হলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন জেলার বাসিন্দারা।
মীরসরাইয়ে ফেনী ও মুহুরী নদীসংলগ্ন কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে জলমগ্ন হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে মানুষ। এসব ইউনিয়নের মধ্যে করেরহাট, ধুম, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ওচমানপুর, ইছাখালী ও কাটাছরা ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া নতুন করে অনেক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মীরসরাই উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় উপজেলার করেরহাট, ধুম, জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, ওচমানপুর, কাটাছড়া, ইছাখালী, খৈয়াছড়া ও মায়ানী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খোলা হয়েছে ৭৯টি কেন্দ্র।
শনিবার পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও চিকিৎসাসেবা দিতে উপজেলার জোরারগঞ্জ ও করেরহাট ইউনিয়নে দুটি ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী।
নোয়াখালী ॥ বন্যায় বিপর্যস্ত নোয়াখালী। থেমে গেছে জনজীবন। পানিবন্দিদের অবস্থা চরমে। ফসলের জমি, গবাদি পশুর এমন ক্ষতি ২০০৪ সালের পর আর এমন দেখেননি বন্যার্তরা। প্রাথমিক হিসেবে ৪ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালীতে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন নি¤œ আয়ের লাখ লাখ মানুষ। নোয়াখালীতে বৃষ্টি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানি। এতে জেলার লাখ লাখ বাসিন্দা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটছেন। শনিবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা জজ আদালত, চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সড়কসহ জেলা শহর মাইজদীর নাপিতের পোল, মাস্টারপাড়াসহ প্রায় সব সড়ক হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যার কারণে শহরের সড়কগুলোতে রিক্সা, অটোরিক্সার চলাচলও কম। হেঁটে পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন মানুষ।
শহরের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার-সংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, পানির কারণে পাঁচ দিন ধরে গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন তিনি। ঘর থেকে বের হলে উঠানে প্রায় কোমর সমান পানি। ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। খাটের ওপর গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে কোনোমতে রান্নার কাজ সারছেন। তিনি আরও বলেন, আশপাশের মুদিদোকান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পানি মাড়িয়ে দূরে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটাও অসম্ভব। পানি না কমলে হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে।
সাপের কামড়ে আহত হয়ে ৩৫ জন ॥ নোয়াখালীতে গত দুদিনে বন্যা দুর্গত এলাকায় সাপের কামড়ে আহত হয়ে ৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার দুপুরের দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম। তবে তিনি তাৎক্ষণিক এদের পরিচয় জানাতে পারেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত আট দিনের টানা বৃষ্টি ও ফেনীর মুহুরী নদীর পানি নোয়াখালী ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে নোয়াখালীর ৮টি উপজেলার অনেক জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি উঠে যায়। এতে মানুষের স্বাভবিক জীবন যাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত দুই দিনে কবিরহাট ও সুবর্ণচরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্প দংশনে আহত হয়ে ৩৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম আরও বলেন, গত শুক্রবার ৯ জনকে এবং এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার ২৬ জনকে বন্যাকবলিত এলাকায় মাঠে ঘাটে কিংবা বাসাবাড়িতে কাজকর্ম করার সময় সাপ তাদের দংশন করে। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এসব সাপ গর্ত থেকে বাহিরে আসছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
খাগড়াছড়ি ॥ বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। নেমে গেছে বন্যার পানি। সকাল থেকে বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করে মানুষজন। জীবন যাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। পানি নেমে যাওয়ায় জমে থাকা কাদা, ময়লা, আবর্জনা সরিয়ে ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন ভুক্তভোগী মানুষেরা। পানি নামতে শুরু করায় সর্বত্র ক্ষতের চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে।
পানি ও স্রোতে ভেসে গেছে সেতু, ভেঙে গেছে সড়ক। ভেসে গেছে পুকুরে মাছ ও নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি কমায় জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও মহালছড়িতে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি ও কৃষি জমি ছাড়া অন্যান্য জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে। পানি নামার পর ক্ষত চিহ্ন ফুটে উঠছে। এদিকে পানি কমে যাওয়ায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা।
বন্যা দুর্গতরা জানান, বিগত ৪০ বছরেরও তারা এমন পানি দেখেননি। এদিকে কর্মকর্তারা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কাজ করছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে ত্রাণ সহায়তা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি আসছে বিভিন্ন দিক থেকে।
কুমিল্লা ॥ দুইদিন ধরে বৃষ্টি না হলেও গোমতী নদীর ভাঙনের পর ক্রমান্বয়ে একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ-লাখ মানুষ। বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ না থাকা ও খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
পানিবন্দি এসব মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও নৌকা বা স্পিডবোট না থাকায় ত্রাণ বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। কেউ অনাহারে আবার কেউবা অর্ধাহারে রয়েছেন।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজারে কথা হয় জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে তার এক বন্ধু এক ট্রাক ত্রাণ পাঠিয়েছেন। কিন্তু নৌকা না থাকায় সকাল থেকে দুর্ভোগে ত্রাণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছেন, আমরা তাদের কাছে এসব ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে চাই।
এদিকে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেকস্থানে নেই বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে দুর্গত এলাকায় খাদ্য না পেয়ে ত্রাণবাহী গাড়িতে স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর হামলা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার ইছাপুরা মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষে ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দুদিন ধরে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শতাধিক গাড়ি জেলার বুড়িচং উপজেলার দিকে যায় এবং সেখান থেকে নৌকায় করে বিভিন্নস্থানে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়।
খুলনা ॥ ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ তিন দিনেও মেরামত হয়নি। শনিবারও সকালে ভাটির সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ আটকানো চেষ্টা করে। কিন্তু জোয়ার আসার আগে সম্পূর্ণ বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে এলাকাবাসী। এদিকে শনিবার দুর্গত এলাকার মানুষকে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে নৌবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া নগদ অর্থ প্রদান করেছে বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
ফেনী ॥ ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে। জেলার ফুলগাজী পরশুরাম ছাগলনাইয়ার পর ফেনী সদর বন্যকবলিত হয়েছে। জেলা শহরের ট্রাংক রোড, পাছগাছিয়া রোড, জেল রোড, কলেজ রোড, গোডাউন কোয়ার্টার নাজির রোড, ডাক্তারপড়াসহ পৌর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের বসত বাড়ি রাস্তা ঘাট বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।
এতে প্রায় এক লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। গত বুধবার দুপুর থেকে জেলা শহরসহ পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ প্রায় ৪ দিন শহরে মোবাইল নেটওর্য়াক ও নেট কানেকশন বন্ধ ছিল। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার জেলা শহরে আংশিক বিদ্যুৎ সরবারাহ চালু করা হয়েছে। এতে করে মোবাইল ও ইন্টারনেট কানেকশন আংশিক চালু হয়েছে। এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানিয়েছে গত ৭০-৮০ বছরে ও এত ভয়াবহ বন্যা ফেনীতে হয়নি।
ফেনীর পরশুরাম ফুলগাজী ছাগলনাইয়াতে সেনা বিজিবি ফায়ার ব্রিগেডসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ফেনীর বাইরের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রাণ বিতরণের টিম এলাকায় ত্রাণ কজের পাশাপাশি ফেনী শহরের বন্যকবলিতে এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও দোতলা বাসা রয়েছে এমন বাসায় তাদের স্বজনরা আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে তাই খাবার জিনিস না পাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনাসহ শাখা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর ছুই ছুই করছে বা কখনো কখনো অতিক্রমও করছে। তাই নি¤œাঞ্চলের বহু মানুষ কষ্টে রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গজারিয়া উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে প্রশাসন।
শনিবার অধীন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার। জেলার মেঘনা ও গোমতী নদী বেষ্টিত গজারিয়া উপজেলায় বাউশিয়া ইউনিয়নে ৩টি, ইমামপুর ইউনিয়নে ৪টি, ভবেরচর ইউনিয়নে ২টি, হোসেন্দী ইউনিয়নে ২টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ২টি, টেঙ্গারচর ১টি ও গুয়াগাছিয়া ইউপিতে ১টিসহ মোট ১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
তবে এখনো কোনো পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। এরইমধ্যে পানিবন্দি ১০ পরিবারের মধ্যে সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা না হলেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসবে বলে জানান ইউএনও।