ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

মেয়াদ শেষ ৯১ বছর আগে

তিস্তা রেলসেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেই

​​​​​​​সংবাদদাতা, রংপুর

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৩ আগস্ট ২০২৪

তিস্তা রেলসেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেই

ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা তিস্তা নদীর ওপর কাউনিয়া রেলসেতু

হামার বাপ-দাদার কাছে শুনছি এই ব্রিজের মেয়াদ শেষ, ব্রিটিশ আমলের বানা তিস্তা রেলসেতু মেয়াদ শেষের একশো বছরেও এল্যাও ভালো করিল না কোন সরকার’... আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন পাঞ্চরডাঙ্গা গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ আনছার আলী।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার জরাজীর্ণ তিস্তা রেলসেতুর ওপর দিয়ে আন্তঃনগরসহ ১২টি রুটে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা-রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া-নাটোর, কুড়িগ্রাম লালমনিরহাটসহ আটটি জেলার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিস্তা রেলসেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করলেও রেল কর্তৃপক্ষের মেরামত করার নেই কোনো উদ্যোগ। বর্তমানে তিস্তা রেলসেতুটির বয়স ১৯১ বছর। সড়কপথে তিস্তা সেতু হওয়ায় বাস-ট্রাক চলাচল না করলেও প্রায় ১০০ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ রেল ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলছে নিয়মিত।

তবে রেল কর্তৃপক্ষের অনেকে বলেছেন, যে কোনো মুহূর্তে রেলসেতু দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। অনেক স্লিপার কাঠের লোহার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেতু  নির্মাণ বা সংস্কার করা না হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। রেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা নদীর ওপর লম্বা হাজার ১১০ ফুট এবং ১৮৩৪ সালে তা নির্মাণ করা হয়।

নির্মাণের সময় যার মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। তবে হিসাব অনুযায়ী ৯১ বছর আগেই এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে সেতুটির কাঠের পাতগুলো ভেঙে গেছে, কোথাও নাট খুলে পড়ছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হলেও তখন থেকে সংস্কারের মুখ দেখেনি সেতুটি।

তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন চা-বিস্কুট বিক্রেতা রফিকুল বলেন, এই সেতু দিয়ে জেলার কয়েক লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু সরকারের উচিত বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এখনই সেতুটি মেরামত করা। রংপুর রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, দীর্ঘ বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এই সেতুর অনেক অংশে কাঠগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, নাটগুলো খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলাচল করছে ট্রেনগুলো।

১৯৭১ সালে পাক সেনাদের দ্বারা সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর স্প্যান, গার্ডার অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে তা মেরামত করে সেতুটি পুনরায় চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের প্লেট কাঠের পাটাতন স্থাপন করে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী নাজিব কাওসার জানান, এই তিস্তা সেতুতে হাজার ২২১টি কাঠের স্লিপার রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫০টি স্লিপার নষ্ট হওয়ার ফলে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকি স্লিপারগুলো পরিবর্তনের জন্য রেল অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই নষ্ট হওয়া স্লিপারগুলো পরিবর্তন করা হবে। নুব্রেকেটিং করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা আছে। বরাদ্দ পেলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, সেতুটি বহু পুরনো, ব্রিটিশ আমলে কাজ ভালোভাবে হওয়ায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আছে। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেল সেতুটি নির্মাণ করে উত্তরের মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাবে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে  জানান, রেলসেতুটির বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। রেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রেল মন্ত্রণালয় থেকে হয়। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

 

 

 

×