ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

মৌলভীবাজারের দুই নদীর বাঁধ ভাঙন, ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ২৩ আগস্ট ২০২৪

মৌলভীবাজারের দুই নদীর বাঁধ ভাঙন, ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি।

মৌলভীবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু ও ধলাই নদীর ১৩টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। পৃথকভাবে মনু প্রকল্পের দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

অভিরাম ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারের মনু, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ঢলে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্থ ধাপের এ বন্যায় প্রায় চার লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকা না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা। মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী। তিনি শহরের মনু নদীর প্রতিরক্ষাবাঁধের চারটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, মনু ব্যারেজ, চাঁদনীঘাট ব্রিজ, পৌরসভার ওয়ার্কওয়ে, শাহ্বন্দর এলাকা ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকার মনু নদীর বাঁধ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সিলেট বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধবতন এই সেনা কর্মকর্তা। এসময় মৌলভীবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে অতিতের মতো থাকবে। এসময় তিনি বানের পানিতে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চারটি স্পিডবোড প্রদান করার কথা বলেন। এছাড়া ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত  সকল বাঁধ মেরামতের আশ্বাশ দেন।

মনু নদে পানি বেড়ে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর এই দুটি স্থানের বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙনের এই ঝুঁকি এড়াতে সড়ক দিয়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক-সংলগ্ন মনু নদের শহর রক্ষা বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। সংশিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অপরদিকে রাজনগরের দুটি স্থানে মনু নদির বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়েও সিলেটে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ধলাই নদীর বাধ ভেঙ্গে শিমূলতলা নামক স্থানে সড়ক পানিতে তলিয়ে গেলে মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কে ঝুকি নিয়ে যান চলাচল করছে। 

এদিকে, সরকারিভাবে ৭ উপজেলায় চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২শ ৩৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বড়লেখা উপজেলার ৪০ মেট্রিক টন, জুড়ী উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, কুলাউড়া উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন, রাজনগর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন, কমলগঞ্জ ৫০ মেট্রিক টন চাল  বরাদ্দ প্রদান করা হয়। নগদ অর্থ হিসেবে জেলার ৭ উপজেলায় ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জানান, আউশ ধানের ক্ষতির পাশাপাশি সদ্য রোপনকৃত সাত উপজেলায় আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। তবে এই মুহুর্থে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যায়নি।

মনু ও ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার ৪৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১লক্ষ ৯৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টায় মৌলভীবাজার শহরের কাছে মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীতে ১১ সে.মি ও জুড়ী নদীতে বিপদসীমার ১৯৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এম হাসান

×