ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বহু পরিবার পানিবন্দি
অবিরাম ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালী। খুলনার দেলুটিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। বরিশালের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে অব্যাহত বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। হবিগঞ্জে পানিবন্দি ২৫ হাজার মানুষ। লক্ষ্মীপুরে ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুমিল্লায় প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে নদ-নদীর পানি। মৌলভীবাজারের ১৫টি স্থানে বাঁধে ভাঙন।
কক্সবাজারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। খাগড়াছড়িতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রাঙ্গামাটিতে ৩০ গ্রাম প্লাবিত। কক্সবাজারে মারা গেছে দুইজন ও নিখোঁজ দুইজন। এতে ব্যাপক এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার।
অবিরাম বর্ষণ ও উজানের পানিতে প্লাবিত নোয়াখালী। অনেক বাড়িতে কোমর থেকে বুক সমান পানি। গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে পানিতে। ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুর ও অসংখ্য খামারের মাছ। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় এমনই অবস্থা। নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী শহরের নাপিতের পোল, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাসাবাড়ির আঙিনায় হাঁটুর উপরে বৃষ্টির পানি থই থই করছে।
ভারি বৃষ্টি ও ফেনীর মহুরী নদী থেকে নেমে পানিতে নোয়াখালীতে বন্যার আরও অবনতি হয়েছে। এতে ৪ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কে সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নোয়াখালী জেলার প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ আট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফেনী জেলার পানি নোয়াখালী সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ ৮ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফেনী জেলার পানি নোয়াখালী সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, জেলায় সাত লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেগমগঞ্জের একটি উপকেন্দ্রে পানি উঠে গেছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলা বন্যা হয়েছে। এসব উপজেলায় ইতোমধ্যে ৩৮৮ আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জেলায় প্রায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা শুকনো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠে কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। আমরা বিত্তশালী মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আমরা চাহিদার কথা জানিয়েছি।
এদিকে সেনবাগে ভয়াবহ বন্যায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার পানিতে ডুবে উপজেলার কাবিলপুর ইউপির ইয়ারপুর ১নং ওয়ার্ডের সাহেব উল্লাহ বাড়ির সৌদি প্রবাসী মো. সোহেলর ছেলে মাহবুব (৬) নামের এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৮২টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন, সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিসান বিন মাজেদ। বন্যাদুর্গতদের জন্য ২০ টন চাল ও প্রতিটি ইউনিয়নে নগদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার ॥ টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মহেশখালীতে গামবোট ডুবিতে দুইজন নিখোঁজ রয়েছে। নিহতরা হলেন, রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন (২২)।
এদিকে, ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রামুর বাসিন্দারা বলেন, টানা বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহলে দেওয়ান বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ, পোকখালী ও ইসলামপুর এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার। পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা রান্না করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা দরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনা খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
খুলনা ॥ পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর এলাকায় পাউবো বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, আমন ধানের বীজতলা, পুকুর, মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ভদ্রা নদীর জোয়ারের পানির চাপে কালিনগর পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে কালিনগর গ্রাম, সৈয়দখালী, হরিণখোলা, দারুলমল্লিক ও সেনেরবেড়সহ কয়েকটি গ্রামে পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার ম-ল জানান, বাঁধের ওই স্থানে আগে থেকেই নাজুক ছিল। দুপুরের জোয়ারের পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে ২২নং পোল্ডারে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে ৫-৬টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। দ্রুত বাঁধ মেরামত করা না হলে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তারা জানিয়েছে বাঁধ মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল ॥ দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার কবলে পড়ায় বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি খাল ও ড্রেন দিয়ে কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি বরিশাল নগরীর নি¤œাঞ্চলগুলোতে ঢুকে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রধান নদীগুলোতে পানির স্তরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে সকল নদীর সঙ্গে সংযুক্ত দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তারা আরও জানিয়েছেন, পূর্ণিমা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদী তীরবর্তী এলাকাসহ নি¤œাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন।
চট্টগ্রাম ॥ অব্যাহত অতিভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরসহ পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত হতে থাকায় পানি কমছে না, বরং প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যে সড়কগুলো বুধবারও যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত ছিল বৃহস্পতিবার সেগুলো তলিয়ে গেছে। ফলে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল থেমে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টির মাত্র কমার পূর্বাভাস থাকলেও আরও অন্তত তিনদিন চলতে থাকবে।
গত বুধবার রাত থেকে চলা বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবার দিনভর অব্যাহত ছিল। লঘুচাপের প্রভাবে সাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে ঝরছে বর্ষণ। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার। ৭৯ মিলিমিটারের বেশি হলে অতিভারি বর্ষণ বলা হয়ে থাকে। সে হিসাবে এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা অতিভারি। রাত থেকে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কিছুটা কমলেও আরও অন্তত তিনদিন বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা অফিস।
একটানা বর্ষণের ফলে জনজীবনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কর্মজীবীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া এমন বৈরী অবস্থার মধ্যে শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, শুলকবহর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা, ওয়াসা, বাকলিয়াসহ বিরাট এলাকার সড়ক এমনকি অনেক বাড়ির নিচতলা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। সড়কগুলোতে হাঁটু থেকে কোমর পানি। এ অবস্থায় যান্ত্রিক যানবাহনগুলোর চলাচল বন্ধ। যাত্রীদের একমাত্র অবলম্বন প্যাডেলচালিত রিক্সা। তবে এর জন্য ভাড়া গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, অব্যাহত অতিভারি বর্ষণের ফলে প্রায় ৫ দিন ধরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জেটিতে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও সড়ক মহাসড়কের যে অবস্থা তাতে করে পণ্য ডেলিভারি অনেক কমে গেছে। প্রচ- বাতাস এবং সাগর উত্তাল থাকায় বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ। কারণ ছোট জাহাজগুলোর পক্ষে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত যাওয়া এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে ফটিকছড়িতে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে বাড়ি-ঘর ডুবে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বন্যাকবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে মেডিক্যাল টিম। যার ২০টি ইউনিয়নে এবং ৫টি সদরে। এছাড়া নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টিম গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, খালের বাঁধ ভেঙে ও প্রবল স্রোতে পানি উপচে পড়ে ফটিকছড়ির বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবরাখবর রাখছি। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টিম গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে হাটহাজারী উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এখানে আনুমানিক দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন যাপন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ের প্রায় ২৩টি ইউনিয়ন সংযুক্ত সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ ॥ জেলার চার উপজেলার সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কয়েকটি নদীর উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলে তারা বন্যাকবলিত। জেলার পানিবন্দি উপজেলা হলো চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব এলাকার মানুষের জন্য ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমি রানি পাল এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪ উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৪১০টি পরিবারের ২৫ হাজার ৬০৮ জন মানুষ পানিবন্দি। তাদের জন্য ১১৬টি বন্যা কেন্দ্র প্রস্তুত। পানিবন্দি মানুষদের বিতরণের জন্য ৯৬৫ টন চাল, এক হাজার ৫৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা পয়েন্টে খোয়াই নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ২৩ দশমিক ২১ মিটার। যা বিপৎসীমার ২০১ সেন্টিমিটার ওপরে। একই সময়ে নদীর শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১৪ দশমিক ২ মিটার বা বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সদর উপজেলার মাছুলিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা মাপা হয় ১১ দশমিক শূন্য মিটার। যা বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। জেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন এলাকার রোপা আমনের বীজতলা ও সবজির জমি প্লাবিত এবং মৎস্য খামার থেকে মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
লক্ষ্মীপুর ॥ জেলা শহরসহ ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৯০০ পরিবার। প্রায় পুরো পৌর এলাকা বর্তমানে হাঁটু পানির নিচে রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলা বিভিন্ন উপজেলার ৬ লাখ চার হাজার ৫০০ জন মানুষ। মেঘনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বন্যার কারণে উপকূলীয় জেলার ৫টি উপজেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে, সদর, কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা।
প্রবল বর্ষণের সঙ্গে, উজানের পানি এবং মেঘনার জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ফসলি জমি কমলনগর, রামগতি, সদর এবং রায়পুর উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলের ফসল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে, টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে ব্যাপক ফসলি জমি। যার পরিমাণ ১২ হাজার ১৬৬ হেক্টর। এতে বহু মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় সম্পূর্ণরূপে পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন বীজতলা, বোনা আমন, উড়তি আউশ এবং শরৎকালীন সবজির বিস্তীর্ণ জমি।
এদিকে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রাথমিকভাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই হাজার ৩০০ ব্যাগ শুকনো খাবার এবং ২৪ টন চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে এ সহায়তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫৭৬ টন চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ভারি বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার উপজেলার নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। বুধবার রাত থেকে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে আখাউড়া উত্তর, দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ এই চার ইউনিয়নের ৩৪টির বেশি গ্রাম পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০ পরিবার। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানি জমি, শাকসবজির জমিসহ বিভিন্ন মাছের ঘেড়।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৪টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম জানান, হাওড়া নদী ও জাজী গাংসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। তা অতিক্রম করলে আরও নতুন করে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন জানান, দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মাঝে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
কুমিল্লা ॥ প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্রমেই ফুঁসে উঠে গোমতী-কাকড়ী-ডাকাতিয়া নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গোমতি নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর পাড় রক্ষায় রাতভর নির্ঘুম রজনী কাটিয়েছেন পাড়ের বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দরা কাজ করছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, গোমতী নদীর বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে গতকাল থেকে লোকালয়ে কিছু পানি বের হয়েছে। যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি স্থানীয় জনগণের সহায়তায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতের মধ্যে আর যদি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং নদ-নদীর পানি কমে আসবে। আর যদি বৃষ্টিপাতের এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, জেলায় বুধবার পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার আরও কয়েকটি বাড়তে পারে। বন্যা দুর্গতদের চাল ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে তিতাস উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে আটকা পড়েছেন অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছসেবী সংগঠন। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিছু এলাকায়।
তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিন জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক টিম, স্কাউট টিম কাজ করছে। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সবাই কাজ করছে। তিনটি ইউনিয়নে জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আর শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার ॥ কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু ও ধলাই নদীর ১৩টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। পৃথকভাবে মনু প্রকল্পের দুটি স্থানে ভাঙন দিয়েছে।
অভিরাম ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। লাগাতার বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্থ ধাপের এ বন্যায় প্রায় তিন লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকা না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা। মৌলভীবাজারে চতুর্থ ধাপের হঠাৎ করে আবার বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে কলগঞ্জ উপজেলার ইসলাপুর ইউনিয়নের গংগানগর, মোকাবিল, মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি, আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা ও রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর বন্যার পানি প্রবেশ করছে। মনু নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করছে কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর, মিয়ারপাড়া, চকশালন, রাজনগর উপজেলার খাসপ্রেম নগর, একামধু, আদিনাবাদ, উজিরপুর ও কোনাগাও এলাকায়। এ ছাড়াও কুশিয়ারা নদীর সদর উপজেলা ও রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ, ফতেপুর, মনুমুখ ও খলিলপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার তিন শতাধিক গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার ॥ ঈদগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ঈদগাঁও নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করে ঈদগাঁও হাইস্কুল, ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁও বাজারের ডিসি সড়ক এবং অলিগলিগুলো কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গুদাম এবং দোকান-পাটে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ মাল।
বাজারের ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন সওদাগর জানান, তার দোকান এবং গুদামে বন্যার পানি ঢুকে বিপুল পরিমাণ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনি বলেন, ওই ইউনিয়নের সওদাগর পাড়ার অবস্থা খুবই খারাপ। লোকজন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ফরাজিপাড়া সড়কে বেড়িবাঁধের মনজুর মৌলভীর দোকান পয়েন্ট উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
খাগড়াছড়ি ॥ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খাগড়াছড়িতে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি সদর ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উঠেছে শহরের বিভিন্ন সড়কে। পৌর এলাকাসহ জেলা সদরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌর বাস টার্মিনাল তলিয়ে গেছে।
পৌরসভার খবংপড়িয়া, গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরীপাড়া, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিমপাড়া পুরোপুরি পানির নিচে। কেবল খাগড়াছড়ি সদরের ৫ হাজারের মতো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।
অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। বুধবার বিকেল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালী, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছে অন্তত আড়াইশ পর্যটক। এদিকে সড়ক ডুবে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে সাজেক, পানছড়ি, মহালছড়ি ও রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছেন । গত ৩ দিন ধরে সাজেক সড়ক বন্ধ রয়েছে।
খাগড়াছড়ির পৌর প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) নাজমুন আরা সুলতানা জানান, খাগড়াছড়িতে পৌর কর্তৃপক্ষ পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন। পৌর শহরে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে যাদের বসবাস তাদের নিরাপদে কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। পৌর এলাকার বন্যা দুর্গতদের জন্য ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫ হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলার জন্য ৪০০ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করেছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জন্য অতিরিক্ত আরও ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৫০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পানিবন্দি পরিবারের জন্য শুকনো খাবার মজুত রাখা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে।
রাঙ্গামাটি ॥ কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় ৩০টির অধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সাজেক সড়কের কবাখালীর বাঘাইহাট এলাকায় সড়কের একাংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সাজেকে আটকা পড়েছেন দুই শতাধিক পর্যটক।
বন্যার কারণে জেলায় এই পর্যন্ত গৃহছাড়া দুই হাজারের অধিক লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্র নেওয়া হয়েছে বলে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান জানান। জেলার বহু স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান। জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো বাঘাইছড়ি। এই উপজেলার প্রায় সকল গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, বর্তমানে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৮ শতাধিক পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্র নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার কারণে বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানায়। কাচাঁলং ও শিষক নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী বাঘাইহাট এলাকায় সড়ক ডুবে গিয়ে রাঙ্গামাটির সঙ্গে সাজেকসহ বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাজেক যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ডুবে যাওয়ার কারণে সেখানে আটকা পড়েছে বহু পর্যটক। সেখানে তারা পানিও খাবারের সংকটে পড়েছে।
পাহাড় ধসের ভয়ে সদরে শতাধিক লোক কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্র আশ্রয় নেওয়া লোকজকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খারার দেয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬৭ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানায়।
বরগুনা ॥ পায়রা নদীতে স্বাভারিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি ও অবিরাম বৃষ্টির পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। এতে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পঁচে গেছে। জলকপাট বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, আমতলীতে এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। ওই জমিতে বীজ বপন করতে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করেছে। কিন্তু পূর্ণিমার জোর ও বৃষ্টির পানিতে মাঠে পানি থই থই করছে। ফলে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে।
ঝলকাঠি ॥ এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিপাত চলছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাতে শহরের সকল সড়ক পানিতে ডুবে তলিয়ে ছিল এবং গ্রামাঞ্চলে এই বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের রাস্তার পাশের দোকানগুলো মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হলেই শহরের রাস্তা সংলগ্ন ড্রেন থেকে দ্রুত পানি সরে যেতে না পারায় পৌরবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়।