ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

চমেক হাসপাতাল পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা

দেশ স্থিতিশীল করতে ৩ থেকে ৬ মাস লাগবে ॥ সারজিস

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২১ আগস্ট ২০২৪

দেশ স্থিতিশীল করতে ৩ থেকে ৬ মাস লাগবে ॥ সারজিস

সারজিস আলম

রাষ্ট্র স্থিতিশীল করতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় দেওয়ার কথা বলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে পার্শ^বর্তী দেশ সহায়তার বদলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। বুধবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় তারা সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ হলো স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি এবং আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এখন সমস্যা যেটি হচ্ছে তা হলো, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে যে মানুষটি একটিমাত্র কথা বলার সাহস করেনি, বিগত ৫৩ বছরে যারা সাহস করেনি সেই মানুষগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাইছে ১৬ দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাক।

এ মানুষগুলো তাদের ব্যক্তিগত কিংবা ছোট একটি গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রাজপথে নামছেন, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করছেন। আমরা মনে করি, তারা যদি এ ধৈর্যটুকু না ধরে এতবড় ক্ষতপূর্ণ রাষ্ট্রের সংশোধনের দাবি তোলেন তার জন্য সময় প্রয়োজন। সেই সময় না দিয়ে তারা যদি তাদের জায়গা থেকে এ ব্লকেডগুলো বিভিন্ন জায়গায় করেন তার মানে তারা রাষ্ট্র স্থিতিশীল হওয়ার জন্য যে ফ্লো দরকার সেই ফ্লোতে বাধা দিচ্ছেন। তাদের অবশ্যই ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছি। পুরো বাংলাদেশের সকল খাতের সকল বৈষম্য। এই ১৬ বছরে বিগত সরকার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করেছে। আমরা যদি কাজ করতে যাই, মাথা থেকে মূল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে। এখন মাথাগুলো শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে প্রত্যেক স্টেপে যাওয়া হবে। ২০তম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা যদি মনে করেন তার সকল সুবিধা আজকেই বুঝিয়ে দিতে হবে, তা হলে বুঝতে হবে আপনি সরকারকে বাধ্য করছেন, যেটি স্বৈরাচারী শাসনের আরেকটি উদাহরণ।
এই সমন্বয়ক আরও জানান, স্পষ্ট বলি। অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিন এবং দাবি জানান। আমাদের কাছে আসুন, আমরা বড় বড় গোষ্ঠীগতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হোক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক এ প্লাটফর্মগুলোর সঙ্গে বসার ব্যবস্থা করে  দেব। তবে পূর্ব শর্ত হচ্ছেÑ রাষ্ট্রকে মিনিমাম একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসার জন্য অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস সময় দিতে হবে। এরপর মিডিয়ার উদ্দেশে সারজিস বলেন, এতদিন আপনাদের যে কথাগুলো বলা উচিত ছিল।

আপনারা এ কথাগুলো বলতে পারেননি  বা বলতে দেওয়া হয়নি। এটি সত্যি। এখন আপনাদের সত্য প্রকাশ করতে হবে এটা আপনাদের দায়বদ্ধতা। হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্দেশে এ সমন্বয়ক জানান, অধিকাংশ চিকিৎসক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছু চিকিৎসক কেন এ পেশায় এসেছেন তা জানি না। প্রত্যেক হাসপাতালে গত ১৬ বছরে সিন্ডিকেট নামধারী কিছু মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি হয়েছে। এ মানুষগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে, রোগীদের নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছেন তা বন্ধ করতে হবে। টাকা খাওয়ার ব্যবসা যদি বন্ধ না করেন তা হলে সিন্ডিকেট কীভাবে উৎখাত করতে হয় ছাত্র সমাজ ভালোভাবে জানে। 
অপরদিকে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, ’৭৫-এর পর যেভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে যায় একইভাবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে যায়। এখন একটি রাজনৈতিক দলের অধীনে আবার সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। আমরা সর্তক করতে দিতে চাই, জনমুখী সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি মাফিয়াতন্ত্র তৈরি করেন তা হলে ছাত্ররা শেখ হাসিনাকে যেভাবে গদি থেকে নামিয়েছিল একইভাবে সিন্ডিকেট উৎখাত করবে। বাংলাদেশ বির্নিমাণের মধ্যে রয়েছে।

আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যে রয়েছি। যথাযথ রাষ্ট্রগঠনের সময় না দিয়ে গত ১৬ বছরের ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনারা যদি এক ধরনের ব্ল্যাকমেল করেন তা হলে মনে করব পুনর্গঠনে সহায়তা না করে ষড়যন্ত্র করছেন। সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান করব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারে যথাযথ ও পর্যাপ্ত সময় দিন। ভূমি অফিস, বিআরটিএ, ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাচ্ছি- এখনো সময় আছে আপনারা লাইনে ফিরে আসুন। দুর্নীতির শৃঙ্খল যদি আরও বৃদ্ধি করেন তা হলে ৫ আগস্টের মতো, গণভবনের মতো, সংসদ ভবনের মতো একই পরিণতি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।
বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে এ সমন্বয়ক বলেন, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারে রয়েছি, পাশর্^বর্তী দেশের যেখানে আমাদের সহায়তা করার কথা সেখানে তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। পাশর্^বর্তী দেশের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা ব্যারিকেড খুলে দিয়ে বাংলাদেশে পানি প্রবেশ করতে দিলেন, অন্যদিকে তিস্তাতে পানির সংকটে চাষাবাদ করা যায় না।

আমাদের যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি দিচ্ছেন না। যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন বেড়িবাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সংকটের মধ্যে ফেলেন। যারা বাংলাদেশের সংস্কারকে পুনর্গঠনকে বাধা দিতে চান, তাদের আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করব।

×