ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের আট জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা।
তিনি বলেন, দেশের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি এই মুহূর্তে বাড়ছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী, হালদা নদীর পানি ৭টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই ও সারিগোয়াইন নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ কারণে ওইসব অঞ্চলের নি¤œœœাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলার জেলা প্রশাসক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্যা আরও বাড়বে কি না- জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকিটা বৃহস্পতিবার বলতে পারব। ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন বলেন, এরইমধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জেলা গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে।
প্রকৃত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা বন্যাদুর্গতদের কাছে আরও ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারব। আমরা খবর পেয়েছি ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টিম ফেনীতে পৌঁছে গেছে। তারা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে সেনাবাহিনীর ছয়টি বোট চলে গেছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো খাগড়াছড়ি।
বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে রাজধানীর বাইর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা জনান, ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে এ তিন উপজেলার ৯০টি গ্রাম।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। বুধবার দুপুরে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। ভয়াবহ এই বন্যায় বানভাসি মানুষদের উদ্ধারে বুধবার দুপুর কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
নোয়াখালীতে বুধবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে থমকে গেছে জীবনযাত্রা। মুহুরী নদীর পানি ঢুকে পড়ায় নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে নয়টি উপজেলার ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আখাউড়ায় ভারতীয় ঢলে তলিয়ে গেছে স্থলবন্দর। হবিগঞ্জে বিপৎসীমার ওপরে খোয়াই নদীর পানি। চাঁদপুরে নদীর পানি বেড়েছে। খাগড়াছড়িতে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে বুধবারও ছিল অতিভারি বর্ষণ। রাঙ্গামাটিতে নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিলেটে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পোয়েছে।
ফেনী ॥ জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি স্থানে দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী,পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নদী ভাঙন নিয়ে পানি ঢুকে ১২ ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার পানিবন্দি মানুষকে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পরশুরামে একজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা। ফুলগাজীতে একজন মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ভূইয়া।
নোয়াখালী ॥ পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি ঢুকে নয়টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। নতুন করে জেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত জেলা আবহওয়া অফিস রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে নয়টি উপজেলার ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও খামারের মাছ।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ নয়টি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এদিকে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এছাড়া নোয়াখালী পৌরসভা ও জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, অনেক ঘরে হাঁটু পানি, রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে রান্নাও করতে পারেনি অনেকে। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে অনেক শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জেলার ৭টি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শহরের পুলিশ কেজি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ছোট ছোট শিশুরা পরীক্ষা দিতে এসেছে বিদ্যালয়টিতে। এতে শিশু ও অভিভাবকেরা ভোগান্তির মুখে পড়েন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ ফ ম রহমত উল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য পরীক্ষা শুরুর সময়ও তারা পিছিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী আসতে না পারে, সেটি বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
চট্টগ্রাম ॥ গত ৪ দিনের ধারাবাহিকতায় বুধবারও ছিল অতিভারি বর্ষণ। বৃষ্টির সঙ্গে সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে নগর ছাড়াও বিস্তীর্ণ জনপদ। গ্রামে দেখা দিয়েছে বন্যা। মাঠ ঘাট সর্বত্রই পানিতে থৈ থৈ। জনজীবন একেবারেই থমকে গেছে। পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়েছে খেতের শাক সবজি ও আমন বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বর্ষণের কিছুটা মাত্রা কমলেও আরও অন্তত দু’দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর চলমান থাকে বর্ষণ। বর্ষা ঋতুর পর ভাদ্র মাসেও এতবেশি বৃষ্টিপাত কমই দেখা গেছে, এমনই বলছেন ভুক্তভোগীরা। গত কদিন ধরে বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে প্রধানত নগরজীবনে। কারণ, নগরে পানি নিষ্কাশন ও অপরিকল্পিত আবাসন একটি বড় সমস্যা। কিন্তু বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবার গ্রামাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও শাখা সড়কগুলো পানির নিচে। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে বুকপানি। বিশেষ করে নদী ও খালের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অনেক বাড়িতে পানি উঠেছে। নিজেদের থাকার সমস্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গৃহপালিত গবাদি পশু রাখার সংকট।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতারা জানান, বেশ ক’বছর ধরে বর্ষাও কাটছিল কম বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এবার যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা মানুষের জীবনকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জমিতে থাকা শাক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। আমন মওসুমকে সামনে রেখে যে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল তা পানির নিচে। ফলে ধানের চারায় পচন ধরতে শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকু-, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লোহাগাড়াসহ সকল উপজেলায় একই চিত্র। গ্রামে বন্যার ভয়াবহ কারণ অতিভারি বর্ষণের পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের তোড়ে প্লাবিত হয়েছে অনেক বাড়িঘরও।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জানানো হয়, বর্ষণ সত্ত্বেও জেটিতে জাহাজ থেকে কন্টেনার উঠানামা স্বাভাবিক ছিল। পণ্য ডেলিভারি হয়েছে কম।
তবে বর্হিনোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য লাইটারিং এক প্রকার বন্ধ। কারণ খোলা পণ্য হওয়ায় জাহাজের হ্যাচ খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। কার্গো লাইটারিং সীমিত হয়ে পড়ায় অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
হবিগঞ্জ ॥ খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত এবং নদীর উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে থাকে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, খোয়াই নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গত দু’দিন প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। বুধবার দুপুরে খোয়াই নদীর জেলা শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাল্লা পয়েন্টে ২৩১.৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিনি বলেন, বুধবার ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমে যাবে। শহররক্ষা বাঁধ ভাঙার কোনো আশঙ্কা নেই। এখনো পর্যন্ত কোথাও বন্যা বা প্লাবন দেখা দেয়নি।
চাঁদপুর ॥ গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৭১ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ভেতরে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বুধবার দুপুরে বৃষ্টিপাতের এই তথ্য জানান চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ মো. শোয়েব।
খাগড়াছড়ি ॥ টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ল-ভ- হয়ে গেছে পুরো খাগড়াছড়ি জেলা। জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। জেলায় ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন।
মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সিঙ্গিনালা গ্রামের কাপ্তাই পাড়া এলাকায় একমাত্র সড়কের সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
টানা বর্ষণ ও বন্যার কারণে বুধবার ভোরে এই সংযোগ সড়কটি ভেঙে যায়। ৪০ বছরের পুরানো এই জড়াজীর্ণ সেতুর কারণে সেতুর সংযোগ সড়কের দেওয়াল ধসে সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে বলে জানান এলাকাবাসীরা।
রাঙ্গামাটি ॥ কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বন্যার পানিতে নতুন নতুন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্রমাগত ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে রাঙ্গামাটির জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। থেমে থেমে রাঙ্গামাটিতে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে এছাড়া মারিশ্যা দীঘিনালা সড়কে ও সাজেক সড়কে মাচালং ও বাঘাইহাট এলাকায় পানি উঠেছে। সেখানে আটকা পড়েছে পর্যটক ও বেশ কিছু যানবাহন। বৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সিলেট ॥ পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টের নদ-নদীর পানি বেড়েছে।