ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

গাইবান্ধার দেওয়ালে দেওয়ালে দ্রোহ ও সম্প্রীতির বার্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২০ আগস্ট ২০২৪

গাইবান্ধার দেওয়ালে দেওয়ালে দ্রোহ ও সম্প্রীতির বার্তা

সদরের দেওয়ালে প্রতিবাদী স্লোগান লিখছেন শিক্ষার্থীরা

দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিতি, ক্যালিওগ্রাফি ও পেইন্টিং করছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ত্যাগ, আত্মাহুতি ও সফলতাকে স্মরণীয় করে রাখতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দেওয়ালে আঁকছেন এসব চিত্রকর্ম। দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেক প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার পরিবেশন করতেও দেখা গেছে।
জেলা শহরের পুরনো জেলখানা এলাকার গোলচত্বর থেকে ডিবি রোড ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সড়কের দুপাশের দেওয়ালে চোখ আটকে যাবে যে কারও। সড়কের পাশের বিভিন্ন ভবন ও সীমানা প্রাচীরের দেওয়ালগুলো যেন এক একটি বিশাল ক্যানভাস। সেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আঁকা নানা রকম গ্রাফিতি। দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িকতা, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে হত্যার বিচারের দাবি উঠে এসেছে গ্রাফিতির মাধ্যমে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘দ্রোহের ভাষা’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। জেলা শহরসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিতি অঙ্কন করছে শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ। 
মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কেউ দেওয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। কেউবা সেই প্রলেপ দেওয়া জায়গায় আঁকছেন লাল-সবুজের পতাকা। কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়। শিক্ষার্থীদের এ রকম ব্যস্ততা দেখা যায় স্কুল লেনের একটি ভবনের দেওয়ালে। দীর্ঘ ওই দেওয়াল রং তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে।

যেখানে দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে লাল-সবুজের পটভূমিতে বাংলাদেশের মানচিত্রের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাহসিকতার প্রতীক আবু সাঈদ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে দেওয়ালে অযাচিতভাবে পোস্টার লাগানো ছিল। যা শহরের সৌন্দর্য নষ্টের কারণ। সেগুলো পরিষ্কার করে আমরা গ্রাফিতি এঁকেছি। গ্রাফিতি আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। এর মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলছি।

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের জন্য এটি একটি বার্তা- যে কোনো ধরনের স্বৈরাচারী কর্মকা- এদেশের জনগণ আর মেনে নেবে না। দেশ বিনির্মাণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এসব স্মৃতি উজ্জীবিত করবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই এ উদ্যোগ, বলছেন তারা।

ঝিনাইদহে প্রতিবাদী স্লোগান 
নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে জানান, ঝিনাইদহ শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখনের কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। লিখছেন সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করার পাশাপাশি দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিতি, দেওয়াল  লিখন ও রং করার কাজ করেন তারা। রং নিয়ে ব্রাশের মাধ্যমে শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়াল রঙিন করে তোলা হচ্ছে।  

শিক্ষার্থীরা জানান, দেওয়ালগুলো আমরা রঙিন করে সাজাতে চাই। দেশের বীরত্বগাথা দিয়ে ভরে ফেলতে চাই। আমাদের শহরটাকে আমরা আমাদের মনের মতন করে সাজাব। এ ছাড়াও দেওয়ালে নতুন করে আঁকছেন ইসলামি ক্যালিগ্রাফিসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম। সেইসঙ্গে দেশ সংস্কারের স্লোগানও লিখছেন তারা। শিক্ষার্থী সাজিদ মাহমুদ জানান, এই লেখনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে সহায়তা করবে।

×