শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীতে চলছে বালু লুট
নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী খরস্রোতা পাহাড়ি ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত অর্ধকোটি টাকার বালু লোপাট হচ্ছে। উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে চেল্লাখালী নদী, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে ভোগাই নদী। ভোগাই নদীর তীর ভেঙে ও গভীর গর্ত খুঁড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে জেলার একমাত্র নাকুগাঁও স্থলবন্দর। একইসঙ্গে হুমকিতে পড়েছে সীমান্ত সড়কে নির্মিত ভোগাই ব্রিজটি। উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও পরের দিনই নদী থেকে পুরোদমে বালু উত্তোলন শুরু করে ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, চলতি বাংলা সনে এক বছরের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর ৫টি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় কালাকুমা, হাতিপাগার, ফুলপুর নয়াবিল ও মন্ডলিয়াপাড়ায় বালুমহালটি ইজারা নেয় জিলানী এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ইজারা-বহির্ভূত এলাকা নাকুগাঁও, কালাকুমা ও তারানী মৌজার নিষিদ্ধ সীমানা (জিরো পয়েন্ট) থেকে বেশকিছু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল।
বর্তমানে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৯০-১০০টি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত মিনি ড্রেজার বসানো হয়েছে। নদীর তীর ভেঙে নিয়ম- বহির্ভূতভাবে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে নদীর পশ্চিম তীরে থাকা নাকুগাঁও স্থলবন্দর, পুলিশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও নাকুগাঁও কাস্টমস কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে। সেইসঙ্গে হুমকিতে রয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। এদিকে, চেল্লাখালী নদী চলতি বাংলা সনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি।
ওই নদীর বুরুঙ্গা ও খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের নিষিদ্ধ সীমানা (জিরো পয়েন্ট) থেকে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচার করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ওই নদীর উত্তোলিত বালু বারমারী বাজার এলাকার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে স্টক করে ভুয়া চালানের মাধ্যমে ট্রলি, লরি ও ট্রাকভর্তি করে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগীরা জানান, দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালু ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি ড্রেজিং মেশিনের সেটে রাত-দিন বালু উত্তোলন করলে স্থানভেদে ২-৩ ট্রাক বালু উত্তোলন করা যায়। বর্তমানে এক ট্রাক বালুর মূল্য ট্রাকের সাইজভেদে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতিটি ড্রেজিং সাইটে প্রতিদিন গড়ে অন্তত এক থেকে দেড় লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এ হিসাবে পুরো নিষিদ্ধ এলাকা হতে প্রতিদিন লোপাট হচ্ছে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকার বালু। যা অন্যান্য সময়ে কয়েক মাসের সমান।
শুধু তাই নয়, ওইসব বালু বিক্রির পাশাপাশি আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে নিজেদের ছাপানো রসিদ বইয়ের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে রয়েলিটিও। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা-বহির্ভূত স্থানের বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও কামনা করা হয়েছে।
এরপরও যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, ইজারা-বহির্ভূত স্থান ও ইজারাবিহীন নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।