ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

চিটাগাং চেম্বার

এবার পরিবারতন্ত্রের অবসান চান ব্যবসায়ী সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৯ আগস্ট ২০২৪

এবার পরিবারতন্ত্রের অবসান চান ব্যবসায়ী সমাজ

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাদের দাবি, শতবর্ষী এই চেম্বারে যুগের পর যুগ চলছে পরিবারতন্ত্র। ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে আসছে পরিচালনা বোর্ড। ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি কার্যত ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। উপরন্তু ব্যবসায়ী সমাজ নানাভাবে উপেক্ষার শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে, অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে তারা বলছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় চিটাগাং চেম্বারের অর্জন বিশাল। এরমধ্যে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ নানাক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা।
‘চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী সমাজ’ ব্যানারে এরমধ্যে একটি সমাবেশও করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চিটাগাং চেম্বারের প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নুরুল হক। কর্মসূচিতে যোগদানকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, এই চেম্বার ভোটবিহীন অবৈধ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা এ পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ চাই।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতা এসএম নুরুল হক সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে তা পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতা। সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকগণের প্রায় সকলেই দুটি পরিবারের সদস্য বা সাবেক দুই নেতার মনোনীত। আমরা চাইÑ এ কমিটি পদত্যাগ করে ব্যবসায়ীদের সুষ্ঠু ভোটের মধ্যদিয়ে একটি নতুন কমিটি আসুক।
ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে বেআইনি কমিটির পদত্যাগ। চেম্বারের নির্বাচন প্রক্রিয়ায়ও সংস্কার আনা প্রয়োজন। এখানে অনেক ভোটার রয়েছেন যাদের মেম্বারশিপ প্রশ্নবিদ্ধ। যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে সদস্য তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। আবার অনেকেই রয়েছেন যারা সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য হলেও দেওয়া হচ্ছে না। চট্টগ্রামে পানের দোকান থেকে শুরু করে একেবারে বৃহৎ ব্যবসা পর্যন্ত হাজার হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কোটারি ব্যবস্থার কারণে তাদের মেম্বারশিপ দেওয়া হচ্ছে না।

চেম্বারের  নির্বাচনে যে কেউ মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে পারেন না নিয়ন্ত্রণকারীদের পছন্দ-অপছন্দের কারণে। প্রতিবারই পরিচালকম-লী  ঠিক করে দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে, যার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ বা সাহস কারও নেই। 
প্রসঙ্গত, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ওপর প্রায় দুই যুগ ধরে কর্তৃত্ব রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য এমএ লতিফের। তিনি সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তাঁর পুত্র ওমর হাজ্জাজ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আর এক পুত্র রয়েছেন পরিচালক হিসেবে। সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের মেয়ে রাইসা মাহবুব চিটাগাং চেম্বারের সহসভাপতি। 
এসএম নুরুল হক বলেন, আমাদের আন্দোলন খুবই শান্তিপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন আমাদেরই সম্পদ। কেউ যেন এর ভাঙচুর বা ক্ষতিসাধন করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, চিটাগাং চেম্বারে পরিবারতন্ত্র ও রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। আমরা চাই ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি রাজনীতিমুক্ত হোক।

পরপর দুই মেয়াদের বেশি যেন কেউ পরিচালক হতে না পারেন। তা ছাড়া আমরা যুগের চাহিদা বিবেচনায় তরুণ নেতৃত্ব আসার সুযোগ করে দিতে চাই। কারণ, তথ্য প্রযুক্তিসহ নানাক্ষেত্রে তারা প্রবীণদের চেয়ে অগ্রসর ও আধুনিক। বর্তমান নেতৃত্বের পদত্যাগ এবং ভবিষ্যতে প্রতিটি পরিচালকম-লী ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন, এটিই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। 
এদিকে, পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে একজন জানান, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। বরং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেন। কিন্তু নির্বাচনে হার-জিতের সম্ভাবনা বিবেচনা করে তারা ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। তা ছাড়া এ চেম্বারের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে নির্মিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। এ ছাড়া দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ নানাক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখে আসছে চিটাগাং চেম্বার।

×