বুধবার শাহবাগ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন সম্প্রীতি সমাবেশ করে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজসহ সকল শহীদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ধানমন্ডি রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে রাপা প্লাজায় মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
বুধবার শেখ হাসিনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্টেন্স উইক’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে এ কর্মসূচি করেন তারা। শাহবাগ থেকে পদযাত্রা শুরুর আগে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করেছে, আমাদের শিবির ট্যাগিং দিয়েছে, আমাদের হলে হলে নির্যাতন করেছে, আমাদের ভাইদের অমানুষিক মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার করেছে, আমাদের বোনদের ছাত্রলীগ যুবলীগ যেভাবে হামলা-নির্যাতন করেছে, তারা যদি আর কখনো এই বাংলার মাটিতে যড়যন্ত্র করতে চায় তাদের প্রতিরোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা খুনি শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর থেকেই দেখেছি বিভিন্ন যড়যন্ত্র চলছে। আমরা প্রশাসনিক ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা জুডিশিয়ারি ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা মিলিটারি ক্যু ঠেকিয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি ১৫ আগস্টে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী দোসররা আবার ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে। যারা জনগণের অধিকার লুণ্ঠিত করেছে, যারা স্বাধীনতাকে লুণ্ঠিত করেছে তারা যদি আবার রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করে তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা দেখেছি যখনই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে, তখন আওয়ামী দোসররা কীভাবে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, জমি দখল করেছে। শাহবাগ থেকে ঘোষণা দিতে চাই, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের প্রাথমিক পরিচয় বাংলাদেশী।
এ সময় সারজিস আলম বলেন, স্বৈরাচার ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র করতে এসে ধরা পড়লে গায়েবানা জানাজা পড়ারও লোক খুঁজে পাবেন না। স্বৈরাচারের দোসররা অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালায়নি, লুকিয়ে আছে আমাদের আশপাশে। যে নৌকার মাঝি সাজুক না কেন, তাদের নৌকাসহ ডুবিয়ে দিতে হবে। আমরা একটি ধাপ পার করেছি মাত্র।
যতদিন পর্যন্ত জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যায়, ততদিন পর্যন্ত ১০ মিনিটের ঘোষণায় রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা বাধা দেবে জনতার স্রোতে তাদের পিষে দিতে হবে। যে গর্ত থেকে ফ্যাসিস্টরা বের হওয়ার চেষ্টা করবে, সে গর্তে তাদের ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এখনো সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভাঙচুরসহ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল, তারা বিভিন্ন জায়গায় উপাসনালয় হামলা চালিয়েছে, কিন্তু ছাত্র-জনতা তা রুখে দিয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজন হলে আবারও রক্ত দিতে প্রস্তুত।
শিক্ষার্থীরা পদযাত্রায় ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগানসহ হাসিনার ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন।
তাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলসহ যারা পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা; প্রশাসন ও বিচার বিভাগের যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাকা-কে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ বারবার কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে; প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।