ভারী বৃষ্টিতে ডুবে আছে আমন ধানের বীজতলা
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় গত কয়েকদিন টানা ভারি বর্ষণ ও অতি জোয়ারে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কৃষকের শত শত হেক্টর আমন বীজতলা তলিয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বীজ (ধানের চারা) সংকটের শঙ্কায় কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আষাঢ় থেকে ২/৩ দফা বীজতলা করেও ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে বাঁচাতে পারেনি বীজতলা। বেশিরভাগই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। সবশেষে শ্রাবণের শেষের দিকে বীজতলা করেও তা গত কয়েকদিন টানা বর্ষণ ও অতি জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় তাও বাঁচানো যাবে কি না শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক।
এদিকে আমন বীজতলা করার আর এখন সময়ও তেমন নেই এবং কৃষকের কাছে বীজতলা করার মতো কোনো বীজধানও নেই। এ কারণে এ বছর আমন বীজের (চাড়া) ভীষণ সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন অনেক কুষক। এ সংকট মোকাবিলায় উচ্চ/চড়া দামে বীজ কিনতে হবে কৃষককে।
উপজেলার দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের কৃষক বাচ্চু হাওলাদার জানান, টানা বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তার ১০ শতাংশ জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশন ও পরিচর্যা করে ওই বীজতলার বীজ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্ট করছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের কৃষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ বছর আমন মৌসুমে দুই দফা বীজতলা করেও বেশির ভাগ বীজ (ধানের চারা) নষ্ট হয়ে গেছে। যাও পানিতে তলিয়ে আছে তা গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার ঘোষের টিকিকাটা গ্রামের কৃষক হরি দাস বলেন, আমি আমন মৌসুমের যে বীজতলা করছিলাম তা পানিতে ডুবে বেশিরভাগই পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর মনে হয় আমন বীজ কিনে অনেককেই আবাদ করতে হবে। কারণ বীজ সংকট দেখা দেবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ভারি বর্ষণ ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে আমন বীজতলা ডুবে থাকায় পচন ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন- চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে স্থানীয় জাতের ও ২ হাজার একর জমিতে উফশী জাতের আমন বীজতলা কৃষকরা করেন। জলাবদ্ধতার অতিরিক্ত পানিতে ডুবে থাকা বীজতলা থেকে ২/১ দিনের মধ্যে পানি না কমলে বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে অনেক কৃষকেরই বীজতলা ভালো রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, খাল ভরাট, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট, স্লুইসগেট নষ্ট, যত্রতত্র অপরিকল্পিত কালভার্টসহ বিভিন্ন কারণে ফসলের মাঠের অতিরিক্ত পানি সরে যেতে পারে না এবং কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি এ অব্যবস্থাপনার কারণে সঠিক সময় পানি নিষ্কাশন করতে পারেন না কৃষক। যার ফলে প্রতি বছরই ভারি বর্ষণের জলাবদ্ধতায় কৃষকের বীজতলাসহ বিভিন্ন আবাদ নষ্ট হয়।