ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

জোয়ারে ডুবছে খুলনা নগরীর দুই ওয়ার্ড

দুর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৭ আগস্ট ২০২৪

জোয়ারে ডুবছে খুলনা নগরীর দুই ওয়ার্ড

প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট অলিগলি ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ না আছে অতি বৃষ্টি, না বন্যা, না আছে নদীভাঙন কিংবা সাগরের নি¤œচাপ। অথচ প্রতিদিন দুই বেলা ভাসছে খোদ খুলনা নগরীর ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা। রূপ নিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। স্লুইস গেট অকেজো থাকা এবং চলাচলের সড়ক নিচু হয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া নদীর তলসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি, সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণ তো রয়েছেই।

তবে এই জনদুর্ভোগের কারণ হিসেবে কেসিসির উদাসীনতাকেও দায়ী করলেন অনেকে। ফলে এখন জোয়ারের সময় নদীতে পানি না নেমে উল্টে নদীর পানি শহরে ঢুকছে। এতে দুর্ভোগের অন্ত নেই এলাকার ৩০ হাজার মানুষের। সংশ্লিষ্টরা জানালেন দুর্ভোগ নিরসনে কাজ চলছে। 
খুলনা নগরী পূর্ব-পশ্চিমে ৩০ ও ৩১ নম্বরের অবস্থান। যেখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। সরেজমিন দেখা গেল বাড়িসংলগ্ন চারপাশেই ময়লা পানি। তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। বসবাড়ির নিচতলায় প্রবেশ করেছে পানি। এমন পরিস্থিতি খুলনা নগরীর মহিরবাড়ির খালপাড়ের বাসিন্দাদের।

শুধু এই এলাকাই নয় একই দৃশ্য টুটপাড়া, মতিয়াখালি, মোল্লাপাড়া, জিন্নাহপাড়া, বড় খালপাড়, গ্যাদনপাড়া, ক্ষেত্রখালী, বোখারিপাড়া, মোল্লাপাড়া, খ্রিস্টয়ানপাড়া, মোহম্মদিয়াপাড়াসহ ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশীর ভাগ এলাকার। এতে ঘরাবাড়ি রাস্তাঘাট হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। জীবাণুযুক্ত পানিতেই সারতে হয় দৈনিন্দিন কাজ। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কোনটি বাড়ির জায়গা, কোনটি রাস্তা কিংবা ড্রেন বোঝার উপায় নেই। ডুবে গেছে অনেক টিউবওয়েল, আর নাজুক হয়ে পড়েছে সেনিটেশন ব্যবস্থা। রান্না করার স্থানটিরও বেহাল। তলিয়ে গেছে রাস্তা ও অলিগলি। হেঁটে কিংবা অন্য যানবহনে চলতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগব্যাধিও।
শিপইয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আলম জানান, শহররক্ষা বাঁধের সাথে মতিয়াখালী ও লবনচরা স্লুইস গত কয়েক বছর ধরে বিকল রয়েছে। ফলে জোয়ারের সময় পানি চাপ দিলেই সেখান থেকে পানি প্রবেশ করে। এছাড়া অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ, উন্নয়ন কাজে ধীরগতি ও নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। 
মহিরবাড়ী খালপাড় এলাকার ৭০ বছর বয়সী আমিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, আমাদের এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। খাবার পানির পর্যন্ত সংকট রয়েছে। এনিয়ে কাউন্সিলর ও মেয়রকে আমরা অনেকবার বলেছি কিন্তু কোন সমাধানের উদ্যোগ নেই। দিনের পর দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যার টাকা আছে সে অন্য এলাকায় বাড়ি করার কথা ভাবছে।
ক্ষেত্রখালি এলাকার গৃহিণী নিশা বেগম বলেন, জোয়ার আসার আগে আমাদের রান্নাবান্না শেষ করতে হয়। একই অবস্থা বাথরুমেরও। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কায়দা নেই।
মোল্লাপাড়ার মোবারক হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন পানি মাড়িয়ে কাজে যাই। জোয়ারের সময় ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চুলকানি, আমাশয়, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিকাঁশিসহ নানা রোগব্যাধী দিন দিন বাড়ছে। 
খুলনা সিটি কর্পোরেশেেনর মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ওই এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। যেখানের রাস্তাও ড্রেনের সঠিক জায়গা রাখা হয়নি। ফলে পনি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ ও নদীর তলদেশ ভরাট হওয়া অন্যতম কারণ।

অর্থাৎ অতি জোয়ারের সময় ড্রেনের পানি নদীতে না পড়ে উল্টে নদীর পানি ড্রেনের মধ্য দিয়ে এলাকায় আসছে। আর যদি জোয়ারের সময় বৃষ্টি হয় তাহলে তো খুলনার শহর ডুববেই। তাই রূপসা ও ভৈরব নদী খনন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে খুলনা শহরে যে আটশ’ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে এটা সম্পন্ন হলে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘোব হবে।

×