ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গারো পাহাড়ের মাটিতে আঙুর চাষ খেতে সুস্বাদু, চাহিদাও অনেক

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৫ আগস্ট ২০২৪

গারো পাহাড়ের মাটিতে আঙুর চাষ খেতে সুস্বাদু, চাহিদাও অনেক

কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল গড়ে তোলা বাগানে আঙুর পরিচর্যায় ব্যস্ত

কৃষি ও খাদ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় কোকোয়া, কফি ও চা চাষে সফলতার ধারাবাহিকতায় এবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি-সুস্বাদু আঙুর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। 
শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী মেঘাদল গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল জলিলের গড়ে তোলা বাগানে আঙুর চাষ ইতোমধ্যে সফলতা এনে দিয়েছে। উৎপাদিত আঙুর স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় অধিক লাভের আশা করছেন এ উদ্যোক্তা। এদিকে জলিলের আঙুর বাগান দেখে অনেকেই এর আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষিবিদদের মতে, সরকারের ঋণ সহায়তাসহ কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে পাহাড়ি এলাকায় আঙুর চাষে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।  
জানা যায়, গত বছর ভারতে ঘুরতে গিয়ে শখের বসে দুই জাতের ১০টি আঙুর ফলের চারা নিয়ে আসেন আব্দুল জলিল। এরপর আরও দুই ধাপে ৪০ জাতের ৮০টি চারা আনেন। নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে এসব চারা রোপণ করেন। এতে সব কিছু মিলিয়ে তার খরচ হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিচর্যার পর বাগানে আসতে শুরু করেছে সুমিষ্ট ফল।

থোঁকায় থোঁকায় আঙুর ধরেছে প্রায় সব গাছেই, যা বিক্রি করে লাভের আশা করছেন জলিল। অন্যদিকে একই বাগানে তিনি নিজেই উৎপাদন করছেন আঙুরের চারা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশে সাধারণত বাইকুনর, গ্রীনলং, একেলো, এনজেলিকাসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির উন্নত জাতের আঙুরের চাষ হয়। গাছের জাতের প্রকারভেদ থেকেই ফলটির টক-মিষ্টির পার্থক্য হয়। তবে গারো পাহাড়ের মাটি আঙুর চাষের জন্য উপযোগী।

এখানকার মাটি অম্লভাবাপন্ন ও আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় কমলা ও আঙুর চাষ করার উপযুক্ত স্থান। এ মাটি লাল সালফারপূর্ণ (গন্ধক) হলুদার্ভ কাকরযুক্ত হওয়ায় এখানে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙুর চাষ সম্ভব। স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করলে এটি জনপ্রিয় ফল চাষ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে আঙুর চাষ লাভজনক বাণিজ্যে রূপ নেবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, আব্দুল জলিলের বাগানে মাথার ওপর বাঁশের মাচায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে আঙুরের ছড়া। খেতেও বেশ সুস্বাদু, আর মিষ্টি ও রসাল। অনেকেই বাগান হতে কিনে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ চারা সংগ্রহ করছেন। কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল বলেন, আঙুর চাষ যে বাংলাদেশে হয়, আমি নিজে তার প্রমাণ পেয়েছি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারা লাগানোর ১০ মাস পর বাগানে ফল আসে।

স্বাদে অনন্য হওয়ায় এ আঙুরের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি চাষাবাদে লাভের মুখ দেখার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আমার মতো অনেকেই এখন আঙুর চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। তিনি আরও জানান, নতুন করে বৃহৎ পরিসরে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছি। এ ছাড়া তার উৎপাদিত চারা আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি। 
এদিকে জলিলের ওই বাগান দেখে আগ্রহী অনেকেই তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন। শেরপুর জেলা শহরের তাতালপুর মহল্লার আনসার আলী এসেছেন বাগান দেখতে।  ঘুরতে যাওয়া সংস্কৃতিকর্মী ও শ্রীবরদী লোকাল ভয়েজের সভাপতি এজেড রুমান বলেন, স্থানীয়ভাবে আঙুর চাষ হলে ফরমালিন মুক্ত ও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া মানসম্মত ফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, আব্দুল জলিলের বাগানে আঙুরের ভালো ফলন হয়েছে। যদি কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এরকম আরও বাগান করা যায়, তাহলে একসময় বাইরের দেশ হতে আর আঙুর ফল আমদানি করতে হবে না। এ ব্যাপারে শেরপুরের শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, কৃষক আব্দুল জলিল প্রথমবারের মতো আমাদের শ্রীবরদী উপজেলায় আঙুর চাষ শুরু করেছেন। অন্য কোনো কৃষি উদ্যোক্তা যদি আঙুর চাষে আগ্রহী হন তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হবে।

×