নেছারাবাদ উপজেলায় প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট
নেছারাবাদ উপজেলায় জমে উঠেছে প্রায় দু’শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। এটি দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট নামে পরিচিত। উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর সড়কের পাশে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার জলে ডাঙ্গায় বসে এ হাট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এ হাটকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আশ্বিন পর্যন্ত নৌকা কেনাবেচার ধুম পড়ে। আষাঢ় মাসে শুরু হয় ভরা মৌসুম। তখন খালের পানিতে ভেসে চলে বাহারি নৌকার কেনাবেচা। হাটে বিভিন্ন সাইজের কাঠের তৈরি নৌকা বিক্রি হয়। আকার ও কাঠের মান অনুযায়ী দাম ধরা হয় প্রতিটি নৌকার। প্রতি হাটে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকার নৌকা বিকি কিনি হয় এখানে। হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে আসে দেশী-বিদেশী পর্যটক।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা, আমড়া, ছাই দিয়ে মাছ ধরা এবং গরুর খাবার সংগ্রহে নৌকার কদর বেশি থাকে। মূলত এ আমড়া ও পেয়ারার চাষ হয় খাল তীরবর্তী বাগানে, যা সংগ্রহ করতে প্রয়োজন হয় নৌকার। একইসঙ্গে জলপ্রধান এলাকা বলে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জন্যও নৌকার দরকার হয়। আবার এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবারই যাতায়াতের জন্য নিজস্ব নৌকা ব্যবহার করেন।
হাটে আসা নৌকাগুলো চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগিনি ও কড়াই কাঠের তৈরি। তবে এখানে বেশিরভাগ চাহিদা রয়েছে রেইনট্রি ও চাম্বল কাঠের তৈরি নৌকাগুলো। এসব কাঠের সহজলভ্যতা ও দাম একটু হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় এ কাঠের নৌকার চাহিদা বেশি। হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর নৌকার দাম বেশি।
সাধারণত বর্ষার পানির ওপর নির্ভর করে জমে এ হাট। এ বছর পানির চাপ বেশি থাকা ও কাঠের দাম, মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকার দাম বেশি। নৌকা ব্যবসায়ী লাল্টু ফকির বলেন, হাটের দিন ভোরে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে ট্রলারে করে হাটে নিয়ে বিক্রি করি। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৬০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকাপ্রতি লাভ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কখনো লোকসানও গুণতে হয়।
নৌকা তৈরির কারিগর সুমন ম-ল বলেন, এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগিনি ও কড়াই কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা। আমার পূর্বপুরুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি নৌকা তৈরি করছি।
আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সবুজ মজুমদার বলেন, এ বাজারে এসে কোনো ক্রেতা এবং বিক্রেতা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকদের বসার জন্য প্রয়োজনে বড় ছাতা ও শেডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাজারকে ঘিরে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঐতিহ্যবাহী হাটটি ১০০ বছরেরও আগে শুরু হয়েছে। এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভ্রমণ করতে আসেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সব সময় সোচ্চার ও হাটের সুনাম অক্ষুণœœ রাখতে উপজেলা প্রশাসন সব সময় সতর্ক আছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে পর্যটকদের থাকার জন্য রেস্ট হাউসের কাজ চলমান রয়েছে।