ছাত্রলীগকে ধাওয়া করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: জনকণ্ঠ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান অসহযোগ আন্দোলনে চাঁদপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সড়কে, আওয়ামী লীগ অফিসে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বাসার নীচ তলায়, সড়ক ভবনে আগুন এবং ৭১ টিভি জেলা প্রতিনিধির ব্যক্তিগত অফিস ভাqচুর করে আগুন দেয়। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, অভিভাক, সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্তত দেড় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়েছেন।
রবিবার (৪ আগস্ট) সকার ১০টায় শহরের বাসস্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। বেলায় ১১টায় ছাত্রলীগের অবস্থান ছিলো পাশবর্তী ইলিশ চত্বরে। ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে।
সকাল ১১টা দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও ছাত্ররা হাতে লাঠি সোটা নিয়ে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হরে এবং এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। শিক্ষার্থীরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়।
এরপর আবার বেলা ১টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা বাসস্ট্যান্ড থেকে আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ড্রোন উড়িয়ে ছাত্রলীগের অবস্থান নিশ্চিত করে ছাত্রলীগের দুপুরের খাবার গ্রহণ অবস্থায় ধাওয়া করে আবারও বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। ওই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও অনেক শিক্ষার্থীর অভিবাবক আহত হন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দুপুরের পরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি আলআমিন ভুঁইয়ার ব্যাক্তিগত অফিসে প্রবেশ করে ক্যামেরা, কম্পিউটার, আসবাবপত্র ও বাহিরে থাকা মটর বাইক ভাংচুর করে। আহত সাংবাদিকরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চাঁদপুর সদর হাসপাতলের রেজিষ্ট্রারের তথ্য অনুসারে সংঘর্ষে আহতরা হলেন- পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আশেকে রাসুল যাওয়াদ, পৌর ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত সানি, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আল হেলাল, যুগ্ম্ আহবায়ক সাদ্দাম, আসমা, নাহিদ, দুলাল, ইসরাত, মীম, শাহনারা, সাহীন, মাহিন, হাসান, আমান, দীন ইসলাম, নাজমুল, সুমন, সুমাইয়া আক্তার, আনিকা, জেলিন, মোতাহের, আবুল হোসেন, রাবেয়া, জাওয়াত, শিশির, মাহমুদুল হাসান, সিহাবুল হাসান করিম, জিসান, কুলসুমা, আরাফাত, হারুন, আলাউদ্দিন, রুমি বেগম, মালেক, সবুজ, ওচমান গণি, ফাইজা, অনিক, তানভির, নিলয়, তানভির, শামীম, মিরাজ, শামীম, জাহিদ, মো. রাসেল, মো. রমজান, ইউসুফ, ইয়ামিন, মো. ইউছুফ, আলী আকবর, মিহরাজ, সিয়াম, রমজানি বেগম, রাসেল, হাবিব, অমিত, নোলক, নাছির, তানহা, ফাতেমা, নাজমা, ওসামা, আমেনা, তসাফিয়া, সাদিক, ফয়সাল, মহসিন, টিপু, ইব্রাহিম রনি, রুবেল, স্বপন, বাবু, রাজন মজুমদার, সুমন, জুম্মান, রাসেল, প্রিতম, আরফান, ফয়েজ উল্লাহ বেপারী, ফারুক, আনাছ, পারভেজ, আরাফাত, সোহেল, সেলিম, জোবায়ের, হৃদয়, রাজু, মোরশেদ, আদনান, সিয়াম, তারিফ, শিক্ষার্থী অভিাবক স্বপন।
পুলিশের মধ্যে আহতরা হলেন-চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম, কনস্টেবল আমেনা বেগম, রুপা, লাভলী, ওবায়েদ উল্লাহ ও মুক্তা।
সাংবাদিকদের মধ্যে আহতরা হলেন-এনটিভির জেলা প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম, একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি আল-আমিন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান বাবলু, দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনি, ঢাকা টাইমস এর জেলা প্রতিনিধি মাজহারুল ইসলাম অনিক, দৈনিক ইলশেপাড় পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এস.এম. সোহেল, সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন নিরব।
এদিকে বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে বহিরাগতরা প্রবেশ করে ডিসি অফিস এলাকায় সড়কে, মিশন, রোড, নতুন বাজার, কালিবাড়ী, ছায়াবানী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বাসার নীচতলায় ও জেলা আওয়ামী লীগ অফিস আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহির হোসেন পাটওয়ারীর বাড়ী, যুবলীগের আবু পাটওয়ারীর অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির হোসেন মিজির ব্যাক্তিগত অফিস ভাংচুর করে। তারা মিশন রোড এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এর আগে দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বাহিরের অংশের গ্লাস ও সড়ক ভবনের বেশ কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে।
এদিকে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে মাত্র ৪টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ঢাকা সদরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও চাঁদপুর-কুমিল্লাসহ আন্ত:জেলা সকল পরিবহন বন্ধছিলো। শুধুমাত্র শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটো বাইক ও রিকশা চলাচল করেছে। তবে তারও সংখ্যা ছিলে খুব কম। সাধারণের মানুষের মধ্যে ছিলে আতঙ্ক। জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ আদালতের দুটি গেট বন্ধছিলো। প্রশাসনের লোকজন কোন গাড়ী নিয়ে অফিসে আসেননি। শহরের খাবারের দোকান ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো।
এসব ঘটনার সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ।
চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজি বলেন, আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিলো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বারবার হামলা করে। এতে আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ কমপেক্ষ ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আশেকে রাসুল যাওয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষ এলাকায় পুলিশের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-এমরান খাঁন। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার দপ্তরেও ভাঙচুর চালায়। অন্য কোথায় ভাংচুর কিংবা আগুন দিয়েছে কিনা ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারবো না। তবে শহরে থম থমে অবস্থাব বিরাজ করছে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
এসআর