চট্টগ্রামে প্রবল বর্ষণে বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র সরিয়ে নেয় লোকজন।
কক্সবাজারের ৯ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অন্তত ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণে ডুবেছে মহানগরীর অনেক এলাকা। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
টানা পাঁচ দিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের ৯ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অন্তত ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও খাবার পানির সংকট। চলাচলের রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে ভুগছে বন্যাপ্লাবিত এলাকার মানুষ। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রামু, সদর ও উখিয়া উপজেলার বাসিন্দারা। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার বৃষ্টি হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। কক্সবাজারে আগামী ৩ দিন ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের শিক্ষক মোস্তফা সরওয়ার জানান, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেকসহ ৮ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকায় ১০ হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস। বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের গোলদীঘিরপাড়, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক উপ-সড়কে প্লাবিত হয়ে একপর্যায়ে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতেও ঢুকে পড়ে।
জেলায় সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত এলাকা উখিয়া উপজেলা। যেখানে দুই শতাধিক গ্রামের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে ২০ গ্রামের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। যেখানে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের এসএম ছৈয়দ আলম জানান, তার ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দি। যেখানে ৫০ গ্রামের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ রয়েছে। রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, ওই ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি আছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে বান্দরবান সদরের সঙ্গে থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে থানচি সড়কের জীবননগর নামক এলাকায় পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ সড়কের ওপর ধসে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। ফলে বান্দরবান জেলা শহরের সঙ্গে থানচি উপজেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকারিয়া জানান, আমি বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পানিবন্দি মানুষকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধস ও বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা ও পাহাড় ধসের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম ॥ ভারি বর্ষণে ডুবেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর অনেক এলাকা। বৃষ্টির সময় সাগরে জোয়ার থাকায় জলজটে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে নগরে। অনেক বাসাবাড়ির নিচতলা ও দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে নাগরিকদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। আরও অন্তত দুদিন এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ থেমে থেমে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরমধ্যে সকাল থেকে বেলা বারটা পর্যন্ত ছিল মুষলধারে বৃষ্টিপাত। এতে বন্দরনগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, জিইসি মোড়, বাকলিয়া, শুলকবহর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, হালিশহর, প্রবর্তক মোড়, তিনপুলের মাথা ও বাণিজ্যপাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জের সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করলে পণ্য বিনষ্ট হয়। নগরীর চকবাজার এলাকায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি সেচ দিতে দেখা যায়। সড়কগুলো তলিয়ে যায় হাঁটু থেকে বুক পানিতে। এতে সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে বিপাকে পড়েন কর্মজীবীরা। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের ঘর ছেড়ে বের হতে হয়নি।
চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৪৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এটি ভারি বর্ষণ। সাগরে এখন কোনো লঘুচাপ নেই। তবে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ও মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সাগরে মাছ ধরার নৌকাসহ ছোট ছোট নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচল করতে হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ভারি বর্ষণের মধ্যেও জেটিতে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। ইয়ার্ড থেকে পণ্য ডেলিভারিও ঠিক আছে। তবে বহির্নোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিং ব্যাহত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহন।