পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় সীমিত পরিসরে বৃহস্পতিবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান কার্ফুর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পাকশী বিভাগের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা করে আয় কমছে। এতে ১৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিনে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় আয় কমেছে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধে স্টেশনের কুলিরা বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে আজ পহেলা আগস্ট থেকে লোকাল ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে।
বুধবার পাকশী রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাকশী রেল বিভাগের আওতাধীন ১১৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ৫৬টি, মেইল ও লোকাল ট্রেন ৫৮টি। এর বাইরে মালবাহী ও তেলবাহী ট্রেন চলাচল করে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সান্তাহার, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী ও ঈশ্বরদীসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ট্রেন যাত্রীরা। কম খরচে, দ্রুত সময়ে এবং কম ভোগান্তিতে বিভিন্ন গন্তব্যে মানুষ ট্রেনকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। তাই ট্রেন চলাচল না করার কারণে সড়কপথে ভেঙে ভেঙে দ্বিগুণ খরচে দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য লোকজনকে ছুটতে হচ্ছে ছোট ছোট যানবাহনে।
পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই রাত থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে পাকশী রেল বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাকশী রেল বিভাগে প্রতিদিন যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনে গড়ে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় হয়। ১৯ জুলাই রাত থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকার বেশি রেলের আয় কমেছে। গত সোমবার থেকে শুধু তেলবাহী ট্রেন পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করছে।
পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) একেএম নূরুল আলম জানান, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পাকশী রেলের আয় কমছে। রেল মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেন চালুর বিষয়ে এখনো নির্দেশনা আসেনি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও কার্ফুর কারণে পাকশী প্রকৌশল বিভাগেই ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি টাকা। পাকশী রেলওয়ে বিভাগের যাত্রীবাহী সব ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রয়েছে, এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে।
পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে পাকশী রেলের প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো আয় কমেছে। ১৯ জুলাই রাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত সোমবার থেকে শুধু পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ নিরাপত্তায় তেলবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তিনি জানান, পহেলা আগস্ট থেকে স্বল্প দূরত্বের কিছু লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালানো হবে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনের কুলিরা পড়েছে বিপাকে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হয়েছেন ঋণগ্রস্ত। উত্তরের জেলা নীলফামারীর ৫৬ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চারটি স্টেশনে ট্রেনে যাত্রী ওঠা-নামা করে। এসব স্টেশনে যাত্রীদের মালামাল বহনের জন্য তালিকাভুক্ত কুলি রয়েছেন। এর মধ্যে চিলাহাটি স্টেশনে ১১ জন, ডোমারে ২৬ জন, নীলফামারীতে ১৮ জন ও সৈয়দপুর স্টেশনে ১৫ জন। তবে রেলওয়ে থেকে কোনো ভাতা বা মজুরি পান না তারা, যাত্রীদের মালামাল বহন করে পাওয়া অর্থেই পরিবারের ভরণপোষণ চলে।