ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

ঘিওরে তিন নদীর তীব্র ভাঙন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:০৫, ৩১ জুলাই ২০২৪

ঘিওরে তিন নদীর তীব্র ভাঙন

ভাঙন রোধে নদীতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ

ঘিওর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিগঙ্গা, ইছামতি ও পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর পানি কমলেও ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। গত দুই সপ্তাহে ভাঙনের কবলে অর্ধশত বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত ছয়টি স্পটে- ভাঙন রোধে প্রায় দুই কোটি টাকার প্রকল্পে ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলাসহ অন্যান্য কাজ শুরু হয়েছে। 
মঙ্গলবার ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরীর ভাঙনের কবলে উপজেলার কুস্তা ও নারচী গ্রামের কমপক্ষে ৮টি পরিবারের লোকজন চালের টিন, আসবাবপত্র, গবাদিপশু নিয়ে ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। 
এ গ্রাম দুটিতে গত এক সপ্তাহে ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে আরও ১২টি পরিবারের বাড়ি। ভিটেমাটি হারা মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনের বাড়িতে। এ দিকে উপজেলার জাবরা, তরা, উত্তর তরা ও নকীব বাড়ি এলাকার অন্তত ২০টি বসতবাড়ি, দুই কিলোমিটার রাস্তা ও ফসলি জমি কালিগঙ্গা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। 
নদী পাড়ের এসব মানুষের দিন কাটছে ভাঙনের আতঙ্কে। কুস্তা গ্রামের প্রবীণ মনির উদ্দিন জানান, গত এক সপ্তাহে তার ২০ শতাংশ বসতভিটার সবটুকুই গেছে ধলেশ্বরী নদীতে। বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কুশু-া গ্রামের সামেলা বেগম বলেন, সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি বাড়ির উঠানের অর্ধেক নদীতে নিয়ে গেছে। দুইটি ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি। আমাদের গ্রামের আরও কয়েক বাড়িতে ভাঙন লেগেছে।
এদিকে শুক্রবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। 
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান জনি, ইউএনও আমিনুল ইসলাম, শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সালামত ফকির, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম, তানজিয়া খন্দকার, ঘিওর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল, সিংজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মিঠু প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বর্ষার শুরুতেই ধলেশ্বরী, ইছামতি ও কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনের কবলে পরে উপজেলার নকিববাড়ি, কুস্তা, নারচী, বেগুননারচী, বাসুদেববাড়ি, শোলাকুড়িয়া, ঘিওর গরুহাটা, তরা এলাকা। ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, বাজার, স্থাপনা ও বিদ্যুতের খুঁটি। উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি বলেন, নদী ভাঙন রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। 
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্র্রকৌশলী মো. সালামত ফকির বলেন, ভাঙন রোধে প্রায় দুই কোটি টাকার প্রকল্পে ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা, গাইড বাউন্ডারি নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। চলমান কাজ শেষ হলে ভাঙন রোধ হবে আশা করছি। 
ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার কয়েকটি ভাঙন কবলিত স্পটে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ বলেন, ঘিওর-দৌলতপুর ও শিবালয় নদীভাঙন কবলিত উপজেলা। প্রতিবছরই নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয় শত শত পরিবার। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। ভাঙনরোধে কয়েকটি পর্যায়ে ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাজগুলো শেষ হলে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে কয়েক হাজার পরিবার।

×