ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়ন(ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা সরকার নির্ধারিত সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে একাধিক লাভজনক পদে থেকে দুই জায়গা থেকে সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ময়না ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা একই ইউনিয়নে অবস্থিত হাটখোলারচর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী (ক্বারী)। তিনি ওই মাদ্রাসায় ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলে সর্বসাকুল্যে ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন পান। সর্বশেষ গত জুলাই মাসেও তিনি মাদ্রাসার মাসিক বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের সম্মানীর ক্ষেত্রে সরকারি অংশ ৪৫০০ টাকা ও ইউপি অংশ ৫৫০০ টাকাসহ মোট ১০,০০০ টাকা পেয়ে থাকেন।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সরকারি বেতন ভাতাও উত্তোলন করছেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে একজন ব্যক্তি দুই স্থান থেকে সরকারি বেতন ভাতা প্রাপ্ত হতে পারেন না।
সূত্র মতে, এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) কোনো মাদ্রাসা বা স্কুল, কলেজের শিক্ষক যদি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তাহলে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ইউনিয়ন পরিষদের এক জায়গা থেকে সরকারি বেতন-ভাতা নিতে পারবেন। কিন্তু প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাটখোলারচর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হক মৃধা একই সঙ্গে শিক্ষক এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দুই জায়গা থেকেই সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন।
এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাটখোলারচর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী (ক্বারী) আব্দুল হক মৃধা বলেন, আমি পরিপত্র দেখিনি,পরিপত্র বিষয়ে আমার জানা নেই। এক সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ রকম অনেক সাবেক চেয়ারম্যানই এমনটা করেছেন। তাহলে তারা কীভাবে করলেন?
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আবু জাফর বলেন, আব্দুল হক মৃধা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার তিনি মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ে ক্বারী পদে চাকরি করেন এবং ১৩ হাজার টাকার মতো বেতন পান। কোন কোন দিন তিনি মাদ্রাসার ছুটি পর্যন্ত থাকেন, আবার কোনদিন আগে চলে যান।
হাটখোলারচর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে দুটি লাভজনক পদে থাকতে পারবে না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার সুপার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে বিষয়টি জানানো হবে। পরিপত্র সম্পর্কে ওই শিক্ষককে জানানো হবে। তিনি যেটি পছন্দ, সেটি বেছে নেবেন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বসতে হবে। ইউনিয়নবাসীরা সেবা বঞ্চিত হলে তো অভিযোগ আসবেই।
ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধার এক সঙ্গে দুই জায়গা থেকে সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, তিনি দুই জায়গা থেকে তো বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণকে সরকার নির্ধারিত সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা প্রদান করে এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার স্বাক্ষরিত পরিপত্রে একথা জানা যায়। ২০২৪ সালের ১৫ মে ওই পরিপত্র জারি করা হয়।
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খুবই কাছাকাছি থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে আসছে। সেবা সহজীকরণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় তা পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অন্যান্য সেবা প্রদান, গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ নানাবিধ সেবা প্রদান করে থাকেন।
জনগণ সাধারণত অফিস সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা গ্রহণ করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের প্রদেয় সেবা সহজে এবং যথাসময়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে চেয়ারম্যানগণকে সরকার নির্ধারিত অফিস সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।
ফলে কম সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে এবং কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে অধিকতর সক্রিয় হবেন। কোন কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ অধিক্ষেত্রের বাইরে অবস্থান করলে বা অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হবে।
এসআর