চাওড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা
অসাধু ব্যবসায়ীরা আমনের বিআর-২৩ জাতের ১০ কেজি প্যাকেটর সরকারি নির্ধারিত মূল্য পাঁচশ’ ৫০ টাকার বীজ সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকায় বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার আমতলী, গাজীপুর, কুকুয়া, কচুপাত্রা ও তালুকদার বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আমতলীতে এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। ওই জমির আবাদের জন্য বীজ ধান প্রয়োজন ৫শ’ ৮০ টন। এর মধ্যে ৯৫% কৃষক ফলন ভালো হওয়ায় বিআর-২৩ জাতের বীজ ধানের চাষাবাদ করেন। উপজেলার মোট জমির অর্ধেক বীজ কৃষকরা মজুত রেখে থাকেন। অবশিষ্ট জমির জন্য দুইশ’ ৯০ টন বীজের চাহিদা রয়েছে। আমতলী কৃষি অফিস দুইশ’ ৯০ টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ চেয়ে পটুয়াখালী বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে চাহিদা পাঠিয়েছে।
কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ৮৭ টন বীজ ধান সরবরাহ করেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এতে বীজ সংকটে পড়েছে। এ সুবাদে উপজেলার বীজ ডিলার ও ব্যবসায়ীরা বিআর-২৩ ধানের বীজ থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করছে। বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। গত সপ্তাহে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় আমতলীর জন্য ২২ টন বিআর-২৩ বীজ ধান সরবরাহ করে। ওই বীজ ধানও বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ সুযোগে আমনের বীজতলার শেষ মুহূর্তে ডিলার মহিউদ্দিন, ইউনুস মিয়া ও দেলোয়ার মৃধাসহ বিভিন্ন ডিলাররা বিআর-২৩ জাতের পাঁচশ’ ৫০ টাকার বীজ সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকায় বিক্রি করেছে। উপায় না পেয়ে কৃষকরা ওই বীজ ধান বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন।
গাজীপুর গ্রামের হাসান হাওলাদার ও বেল্লাল আকন বলেন, ১০ কেজি বিআর-২৩ বীজ ধান গাজীপুর বাজারের হুমায়ুন ঢালীর কাছ থেকে আটশ’ টাকায় ক্রয় করেছি। তবে হুমায়ুন ঢালী বেশি দামে বীজ বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন। কৃষক এমদাদ বলেন, মহিউদ্দিনের কাছ থেকে ৭শ’ টাকায় বীজ ক্রয় করেছি। ডিলার ইউনুস মিয়া বলেন, বিএডিসির দেওয়া ছয় মেট্রিক টন বীজ বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। কৃষকের আরও বীজের চাহিদা রয়েছে। তবে তিনি বেশি দামে বীজ বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন।
ডিলার মহিউদ্দিন বেশি দামে বীজ বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যেই বীজ বিক্রি করছি। পটুয়াখালী বিএডিসি উপ-সহকারী পরিচালক মো. নান্নু মিয়া বলেন, আমতলীতে ৮৭ টন বীজ বরাদ্দ দিয়েছি। সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ বিক্রি করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি বেশি দামে বিক্রি করে তবে উপজেলা কৃষি অফিসার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা বলেন, প্যাকেটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানির নিচে বীজতলা
অমাবশ্যার জোর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির পানিতে মাঠে থই থই করছে। এতে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। জলকপাট বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষক। অমাবশ্যার জোর ও বৃষ্টির পানিতে মাঠে পানি থই থই করছে। ফলে আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। তাদের আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
কৃষকরা জানান, অধিকাংশ বীজতলা পচে গেছে। নতুন বীজতলা তৈরি না করে উপায় নেই। কিছু বীজ পানির ওপরে ভাসছে। ওই বীজের ওপর ভরসা করা যায় না। কিছু কৃষক উঁচু জমির বীজতলা রক্ষায় সেচ দিচ্ছেন কিন্তু কাজে আসছে না। দিনে সেচ দিলেও রাতে ওই বীজতলায় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এদিকে জলকপাটগুলো বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত জলকপাটগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে আমনের কিছু বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানি কমে গেলে আশা করি কৃষকদের তেমন সমস্যা হবে না। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত জলকপাট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।