ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ডহরি-তালতলা খাল, ১০ জন নিহত হওয়ার পর নিষিদ্ধ করে প্রশাসন

 চাঁদা দিয়ে ফের চলছে বাল্কহেড

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৬ জুলাই ২০২৪

 চাঁদা দিয়ে ফের চলছে বাল্কহেড

.

পদ্মার শাখা নদী ডহরি-তালতলা খালে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদার বিনিময়ে বালুবাহী বাল্কহেড চলছে। বেপরোয়া গতিতে দিন-রাত বালু ভর্তি খালি বাল্কহেড চলাচলে ঢেউয়ে খালের দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খালের দুই তীর ভাঙন ভাঙনের মুখে রয়েছে উপজেলার ডহরি বাজার, বড়মোকাম বাজার, হাড়িদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫২টি ঘরসহ শত শত বসতবাড়ি, মসজিদ, স্কুল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজ চক্রের রোষানলে পড়েন এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডহরি পদ্মার পাড় শামুরবাড়ি হাজামপাড়া এলাকার আলী ওস্তাকান হাজামের ছেলে রিপন হাজাম, খোরশেদ হাজামের ছেলে ওসমান হাজাম, শফির ছেলে শাকিল হাজাম, লেকু হাজাম, রুবেল মাতবর, আল-আমীন, মাসুম ঢালী, তাজু ঢালী, আনোয়ার ঢালী, শামুরবাড়ি এলাকার রাজিব খান, ডিএম শেখ, বালিগাঁও এলাকার বিএনপির নেতা রাজন মুন্সি তার ভাই সাজন মুন্সি চাঁদা নিয়ে এসব বাল্কহেড পারাপার করে দিচ্ছে। এদের নামে লৌহজং টঙ্গীবাড়ি থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পদ্মার ভাঙন রোধে দুর্ঘটনা এড়াতে ২০২২ সালে এই খালে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। পরে চাঁদার মাধ্যমে চালু হয় চলাচল। গত বছর আগস্ট এই খালে খিদিরপাড়া ইউনিয়ন রসকাঠি এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ট্রলার ডুবে নারী শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার পরে জেলা প্রশাসন এই খালে বাল্কহেড চলাচলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও চাঁদার বিনিময়ে আবারও নির্বিঘ্নে চলাচল করছে বাল্কহেড।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাল্কহেডের কয়েক চালক বলেন, ‘বালিগাঁওয়ের রাজন মুন্সি সজন মুন্সি, ডহরি খালের মুখ রিপন, ওসমান, রুবেল, আনোয়ার রাজিব খানের নাম বললে সুবচনী বালিগাঁও ডহরি খালের মুখে পদ্মায় লোকজন ডিস্টার্ব করে না। ছাড়া তাদের মাধ্যমে না গেলে আমাদের খালের মুখে সমস্যা হবে। বালিগাঁও থেকে ডহরির পদ্মা নদীর মুখ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে প্রত্যেক খালি বাল্কহেড থেকে নিচ্ছে ১৫শ টাকা এবং ডহরি খালের মুখ থেকে বালিগাঁও পর্যন্ত বালুভর্তি বাল্কহেড পারাপার করে দিচ্ছে হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে। বাল্কহেড সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা থেকে বালু নিয়ে রাজধানী ঢাকা আশপাশে যাওয়ার সহজ পথ এই তালতলা-গৌরগঞ্জ (ডহরি) খাল। তাই এই পথে  হাড়িদিয়ায় খালের তীরের বাসিন্দা লিটন তালুকদার বলেন, গত বছর বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করায় খালের পাড় ভাঙেনি। বছর আবার বাল্কহেড চলাচল শুরু হওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এভাবে বাল্কহেড চলতে থাকলে ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। পূর্বের মতো বাল্কহেড চলাচল বন্ধের দাবি জানান।

পাপ্পু শিকদার জানান, ভাঙতে ভাঙতে খালে অর্ধেক বাড়ি বিলীন হয়েছে। এই খালে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ না করলে বাড়ির বাকি অংশটুকু বিলীন হয়ে যাবে। তাই খালে পূর্বের মতো বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

হাড়িদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান, নদী ভাঙার পর তাদের বাড়িঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। খালে দিনরাত বাল্কহেড চলাচল করায় ঢেউয়ে ভাঙতে ভাঙতে খাল তাদের ঘরের কাছে চলে এসেছে। তাই নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান। বিষয়ে অভিযুক্ত রিপন হাজাম বলেনবাল্কহেড শুধু আমি একা পারাপার করি না। আরও ১৫/২০ জন আছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, বডির (বাল্কহেড) সুকানিরা আমাদের খুশি মনে নিজেরা টাকা দিয়ে যায়। চাঁদাবাজি তো করি না। সরকারি খাল থাকবে, যতদিন খালে পানি থাকবে আমাদের আন্ডারে বাল্কহেড পার হবে। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, নিষিদ্ধ থাকার পরও বাল্কহেড কীভাবে চলাচল করছে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি এবং লৌহজং থানা ছাড়াও নৌপুলিশকে এলার্ট করা হবে।

×