ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

গফরগাঁওয়ে ৩৩ স্কুল ভবন জরাজীর্ণ

শেখ আব্দুল আওয়াল গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৫ জুলাই ২০২৪

গফরগাঁওয়ে ৩৩ স্কুল ভবন জরাজীর্ণ

ঝুঁকিপূর্ণ ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন

গফরগাঁও উপজেলার ৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩টি ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী পাঠদান করছে ওসব ভবনে। এতে  যে কোনো সময় বিদ্যালয় ভবন ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২শ’ ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দীর্ঘদিন যাবত জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে গফরগাঁওয়ের ৩৩টি বিদ্যালয়ের প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত  ৫ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পাঠদান চালাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা পাইথল ইউনিয়নের জয়ধরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিগ্রি ভূমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর হারিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গফরগাঁও ইউনিয়নের ঘাগড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ অধিকাংশ ভবনই একতলা ও হাফবিল্ডিং ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঘাগড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় একতলা ভবনটি  নির্মাণ করা হয় ১৯২৭ সালে। ৯৭ বছরেও তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ বিদ্যালয়ে।

দীর্ঘদিনের পুরাতন বিদ্যালয় ভবনটি বর্তমানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে স্কুল ভবনের দেওয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়েছে ছাদের আস্তর। ভিমের রডগুলো বেরিয়ে পড়েছে। ধসে পড়েছে ভবনের  বিম। দরজা-জানালাও ভেঙে গেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বিদ্যালয়ের এ জরাজীর্ণ ভবনটি।
জয়ধরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভাস বলেন, বিদ্যালয়টি অনেক পুরনো। এ বিদ্যালয়ে ১টি একতলা ভবন থাকলেও ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। টিনশেডটিতে বর্ষাকালে পানি উঠে। ছাত্রছাত্রীরা সাপের আতঙ্কে থাকে। 
একই অবস্থা পাইথল মৃধাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের। একতলা এই পাকা ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৯৪ সালে। নির্মাণের শুরু থেকে ঠিকাদারের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে স্কুল ভবনের দেওয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়েছে ছাদের আস্তর। ধসে পড়েছে অফিস কক্ষের বিম। দরজা-জানালাও ভেঙে গেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটি।

এতে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিকল্প  কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেদোয়ানা আক্তার জানান, প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে।

অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসে না। আমরা সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকি। কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনগুলো ইতোমধ্যে অনুপযোগী ঘোষণা করে ভবনের নিচে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা না করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সবুজ মিয়া জানান, ৩৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যেই প্রায় সবই ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি হলে শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারে না। ছাত্রছাত্রী থাকে আতঙ্কের মধ্যে। 
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল মালেক জনকণ্ঠকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী ভবনগুলো সংস্কারের জন্য অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু ভবন নতুন করে নির্মাণের জন্য এমপির ডিও লেটারসহ (চাহিদাপত্র) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরেই পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু করতে পারব।

হরিশপুরে ৬ শিক্ষক পড়ান পাঁচ শিক্ষার্থীকে
নিজস্ব সংবাদদাতা, নওয়াপাড়া, যশোর  থেকে জানান, অভয়নগরের হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয় শিক্ষক থাকলেও নিয়মিত শিক্ষার্থী উপস্থিতি (গড়) মাত্র ৫ জন। ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১৩ জন। 
১৯৯০ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে একটানা ৩৪ বছর রবীন্দ্রনাথ রায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানালেন, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী এ বছর ভর্তি হয়নি। ১ম শ্রেণিতে ১ জন, ২য় শ্রেণিতে ৩ জন, ৩য় শ্রেণিতে আছে ৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শিক্ষকদের সন্তান ২ জন ভর্তি রয়েছে। এলাকার কোন্দল থাকায় এবং জন্মহার কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে ভাটা পড়েছে। 
গত সপ্তাহে সরেজমিন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুল চালু হওয়ার সময়ে মাত্র ২ জন (বনানী সরকার ও সাবিত্রী ম-ল) শিক্ষিকা উপস্থিত রয়েছেন। খাতা কলমে ১৩ জন ভর্তি শিক্ষার্থী দেখালেও ভুয়া তথ্যে শিক্ষা অফিস থেকে ২২ সেট বই উত্তোলন করা হয়েছে।  ২য় শ্রেণির উপস্থিত শিক্ষার্থী তৃণ ম-ল জানায়, আমরা আজ ৪ জন উপস্থিত আছি।
এলাকাবাসী জানান, স্কুল উন্নয়নে বরাদ্দ নেই, তদারকির ব্যবস্থাও নাজুক। আধা কিলোমিটারের মধ্যে আরও ২টি স্কুল রয়েছে। ফলে অভিভাবকরা ওই দুটো ভালোমানের স্কুলে ছেলেমেয়ে ভর্তি করে। 
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুচরিতা ম-ল মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থী যেমন নেই, তেমনই উন্নয়ন খাতে সরকারি বরাদ্দও নেই।  
উপজেলা শিক্ষা অফিসার  আবুল কাশেম জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রয়োজনীয় শিক্ষক সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হচ্ছে। দায়িত্বে অবহেলা করলে কারও প্রতি অনুকম্পা দেখানো হবে না। অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম আবু নওশাদ জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

×