ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সোহাগপুর গণহত্যা দিবস আজ ॥ ভালো আছেন বিধবারা

সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ২১:৪১, ২৪ জুলাই ২০২৪

সোহাগপুর গণহত্যা দিবস আজ ॥ ভালো আছেন বিধবারা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী সোহাগপুরে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধের সামনে কয়েক বিধবা

‘বিচার পাইছি, বাড়িঘর পাইছি ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইছি। অহন আমরা ভালোই আছি। আর কত দিন বাঁচমু। মইরা গেলেও আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকব না। স্বামী স্বজনদের কথা মনে অইলে খুব কষ্ট লাগে। বর্তমান সরকার রাজাকার ও আলবদরদের বিচার কইরা আমগর হেই কষ্ট দূর কইরা দিছে।’কথাগুলো বলছিলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বীরাঙ্গনা হাফিজা বেওয়া (৭০)। একই গ্রামের অপর বীরাঙ্গনা মহিরন বেওয়া (৭২) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সরকার আমগরে থাহুনের লাইগা বাড়িঘর বানাইয়া দিছে।

নির্যাতনের শিকার অওনে নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিছে। আমগর স্বামী সন্তানগরে মারনের বিচার করছে। আজ ২৫ জুলাই সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার আলবদররা সেদিনের  পৈশাচিক হত্যাকা-  চালিয়ে এই গ্রামের ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন বিধবা হন এই গ্রামের ৬২ জন নারী।

সোহাগপুর বেনুপাড়া গ্রামের সব পুরুষ মানুষকে মেরে ফেলার কারনে স্বাধীনতার পরে এই গ্রামের নাম বদলে দিয়ে নতুন নাম রাখা হয় সোহাগপুর বিধবাপল্লী। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়েতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় অভিযোগটি ছিল সোহাগপুর গ্রামের হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণ। এই অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে মৃত্যুদ- দেন। বর্তমানে সরকারিভাবে সোহাগপুর  গ্রামের ২৯ বিধবা নারীকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। 
ইতোমধ্যে এই গ্রামের বেশ কয়েকজন বিধবা নারী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। স্বজন হারানোর দুঃখ বেদনার ক্ষত আর সেদিনের বিভীষিকা নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আজো বেঁচে আছেন ২১ বিধবা নারী। নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর মধ্যে প্রথমে ১৪ জন ও পরে ৬ জনসহ মোট ২০ জন নারীকে নারী মুক্তিযোদ্ধা তথা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বেঁচে থাকা বিধবারা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক থেকে ৫শ’ টাকা ও সরকারিভাবে আরও বিধবাভাতা হিসেবে ৫শ’ করে টাকা পান।

বিধবা নারী ও স্বাজনরা সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সেই দিনের পৈশাচিক নারকীয় হত্যাকা-ের কথা আজও তারা ভুলতে পারেননি। সোহাগপুর বেনুপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিন (৭৩) বলেন, ‘গরম বালুর মধ্যে যেমনে মানুষ মুড়ি ভাজে। ঠিক তেমন করে পাকবাহিনীরা এই গ্রামে ঢুইকা গুলি ফুটাইছে। ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে হলে আজো শরীল শিউরে উঠে।’ নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, সোহাগপুর গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে নানা কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে। এসব কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

×