ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মাদারীপুরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন স্থাপনা এবং যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে।
এদিকে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আট শতাধিককে আসামি করা হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার হয়েছে।
জেলায় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের মধ্যে দুর্বৃত্তরা সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১০ প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি পেট্টোলপাম্প, ৩২টি যাত্রীবাহী বাস, ৩টি ট্রাক এবং বেশ কয়েকটি ছোট যানবাহন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় অবরোধ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়, বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সদর থানাধীন ১নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে শেখ হাসিনা মহাসড়কের মস্তফাপুর থেকে একযোগে হামলা চালানো হয়। প্রথমে তারা মস্তফাপুর গোল চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা পল্লী বিদ্যুতের গেস্ট হাউসে ভাঙচুর চালায়। এরপর খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এতে অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়।
পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্টোল পাস্পে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় তারা পেট্টোল পাস্পের পিছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের বাসের ডিপোতে আগুন দেয়। আগুনে অন্তত ৩২টি বাস পুড়ে যায়। অন্তত পাঁচটি বাসে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পাম্পে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল, তিনটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে দুষ্কৃতিকারীরা নতুন বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, লেকভিউ হোটেল, মহিলা সংস্থা কার্যালয়, পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়।
শনিবার (২০ জুলাই) রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণপাড়ে অবস্থিত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশে শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্টোল পাম্প ও বাস ডিপো আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেট্টোল পাম্পের যন্ত্রাংশ। একই অবস্থা পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে। অডিটোরিয়ামের ভিতরে থাকা সব চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আসবাবপত্র ও জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে।
সার্বিক পরিবহনের ব্যবস্থাপক গোপাল হালদার বলেন, তাদের কোম্পানির বাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে ৩৫ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে পেট্টোল পাম্পসহ পরিবহন চালু করতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগবে।
পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, আগুনে পৌর অডিটোরিয়ামের ৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলন ইস্যু করে বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন চোরাগুপ্ত হামলা শুরু করে। এ আগে তারা ভাঙচুর চালায়। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাকে তারা লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়।
মাদারীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলায় হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ৮ শতাধিক আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, তদন্ত কমিটি করে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে। পুরো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা বলে জানান তিনি।
এম হাসান