ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মহারশি নদী খনন না করায় বেড়েছে ভাঙন

সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২৩ জুলাই ২০২৪

মহারশি নদী খনন না করায় বেড়েছে ভাঙন

মহারশি নদীর ভাঙনে দিঘীরপাড় গ্রামে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদী নাব্য হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীটি খনন না করায় হারিয়েছে তার নাব্য। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে অবৈধভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ করায় খরস্রোতা নদীটি একটি খালে পরিণত হয়েছে। যে কারণে প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে অবিরাম বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলা শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি জায়গায় ভেঙে ঢলের পানি উপজেলার সদর বাজার, অফিস-আদালতসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাধারণ মানুষ। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মহারশি নদী। নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের শত শত বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে। এতে বিপাকে পড়ে মানুষ। ক্ষয়-ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ টাকাসহ রাস্তাঘাটের। শুধু তাই নয়, বেড়িবাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে কয়েকটি গ্রামসহ দিঘীরপাড় ফাযিল মাদ্রাসা। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে রামেরকুড়া পূর্বপাড়া ও দিঘীরপাড় ফাযিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি গ্রাম।

প্রতিবছর ঢলে ক্ষতিগ্রস্তের পর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সাময়িক নড়েচড়ে বসলেও পরে আর খবর থাকে না। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই নদীতে বেড়িবাঁধের মাপযোগ করেই কাটিয়ে দিয়েছে প্রায় দুই যুগ। ফলে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝিনাইগাতীর মহারশি নদী এখন স্থানীয় জনগণের কাছে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ বছরেই পাহাড়ি ঢল হয়েছে তিনবার। এরমধ্যে তৃতীয় ঢলে রামেরকুড়া পূর্বপাড়া, খৈলকুড়া, দিঘীরপাড় গ্রামসহ ৪টি জায়গায় ভেঙে যায়। এতে দিঘীরপাড় গ্রামে তিনটি বাড়ি গভীর খাদে পরিণত হয়েছে। সেখানে আরও কয়েকটি বাড়িঘর হুমকির মুখে রয়েছে।

পাহাড়ি ঢল আসা মানেই নদীর পাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলো আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আশ্বাসে আর প্রতিশ্রুতিতে কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। এখন আর আশ্বাস নয়, আমরা চাই বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাস্তবায়ন। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্যকে নদী খননসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনুরোধ করছি।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদীর পাড় ভেঙে উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের পুকুরসহ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঝিনাইগাতীতে প্রতিবছর এই ক্ষতি থেকে বাঁচাতে শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে ইউনিয়নবাসীদের পক্ষ থেকে তিনি মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধের নির্মাণের অনুরোধ করেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা জানান, উপজেলাবাসীদের রক্ষায় এই নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল কবীর রাসেল জানান, পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারের প্রত্যেককে ৬ হাজার টাকা আরও ২ বান্ডেল করে ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙনগুলোতে ইতোমধ্যেই জিও ব্যাগ দ্বারা আপৎকালীন কাজ করা হচ্ছে।

পাকা বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত নির্মাণ করা হবে মহারশি নদীতে বেড়িবাঁধ। শেরপুর-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম জানান, মহারশি নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব করেছি। আশা করি এই অর্থবছরেই নির্মাণ করা হবে বেড়িবাঁধ। শুধু আশ্বাস নয়, মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। 

ভোগাই নদীর ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ
সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর থেকে জানান, ‘সব নিছে গা এহন শুধু থাকার ঘরটাই বাকি আছে, তাই রাতে ঘুমাই না, ঘুমের মধ্যে যদি নদী ঘরটা ভাইঙা নেয়।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের খর¯্র্েরাতা ভোগাই নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা বিধবা আছিয়া বেগম (৭০)। তিনি বলেন, সরকার কত মাইনষেরে ঘর দিতাছে এইযে আমি পরিবার নিয়া এত কষ্ট করতাছি কেউ তো কিছু দেয় না।
জানা যায়, বিধবা আছিয়া বেগম সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ ৪ জনকে নিয়ে ভোগাই নদীর তীরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছেন। প্রতিবছরই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আছিয়া বেগমের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙতে ভাঙতে বাড়িটি এখন বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ভিটামাটি ছাড়া আর কিছুই নেই আছিয়া বেগমের। 
সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আছিয়ার বাড়ির পাশে ৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫-২০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শেষ চিহ্নটুকু নিশ্চিহ্ন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে আছিয়ার পরিবার। তাদের দাবি সরকার যেন তাদের জন্য জায়গাসহ একটি বাড়ি করে দেয়। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না। এখন অবগত হলাম। খোঁজখবর নিয়ে খুব শীঘ্রই আছিয়া বেগমের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

×