ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

চার প্রক্টর প্রহৃত

ঢাবি ক্যাম্পাসে ফের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ পাঁচ শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৬, ১৭ জুলাই ২০২৪

ঢাবি ক্যাম্পাসে ফের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ পাঁচ শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মঙ্গলবার সমাবেশ করে ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচ শিক্ষার্থী। আহত হয়েছে অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার প্রক্টরকে মারধর করেছেন কোটা বিরোধীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস ও হল থেকে বহিরাগতদের বের করতে মাইকিং করেছে। সব মিলিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় কোটা আন্দোলনকারীরা। দুপুর দেড়টায় ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। পূর্বষোঘিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর দুইটার পর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে কোটা আন্দোলনকারীরা। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। দুপুর চারটার দিকে ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের পাশ থেকে আরেকটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শামিল হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লাঠি, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, পিভিসি পাইপ ইত্যাদি দেখা যায়। যেসব শিক্ষার্থীদের হাত খালি ছিল তারাও শহীদ মিনার এলাকা থেকে বাঁশ, লাঠি, গাছের ডাল ইত্যাদি হাতে নেয়। বিকেল চারটা দশ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি বাস শহীদ মিনার এলাকা দিয়ে আসার সময় আন্দোলনকারীরা সেই বাসটি ভেঙ্গে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকরী প্রক্টর। এ সময় হঠাৎ করে একদল শিক্ষার্থী চড়াও হয় এবং ছোটাছুটি শুরু করে।

এক পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত হন এবং মাইকে বলতে থাকেন কেউ ঢিল ছোড়বেন না, স্যাররা সামনে আছেন। এ সময় একদল শিক্ষার্থী তেড়ে এসে বলতে থাকেন ‘কালকে কোথায় ছিলেন’ এবং কেউ কেউ অকথ্য ভাষায় গালিও দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। প্রক্টররা তখনই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফুটপাতে অবস্থান করেন। সেখানেও শিক্ষার্থীরা ‘দালাল’, ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে সম্বোধন করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে হামলা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে গেলে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়। কেউ কেউ লাঠি ছুড়ে মারে। এ সময় দৌড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা। এ সময় পেছন থেকে দৌড়ে এসে কয়েকবার লাঠি ও বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয় তাদের। এতে  ফুটপাতে লুটিয়ে পড়েন অনেকে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আহত শিক্ষকরা হলেন-অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. আব্দুল মুহিত, সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারজানা আহমেদ (শান্তা), সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসান ফারুক এবং সহকারী অধ্যাপক ইমামুল হক সরকার টিটু। এ সময় সহকারী প্রক্টরকে রক্ষা করতে গিয়ে হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোতাহার হোসেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, স্ট্যাম্প, পিসিসি পাইপসহ দেশীয় নানা অস্ত্র দেখা দেয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে, তেমন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি।

সন্ধ্যার আগে শেখ রাসেল টাওয়ার থেকে শুরু করে চানখারপুল, দোয়েল চত্বর পর্যন্ত দখলে নেয় কোটা আন্দোলনকারী। এ সময় দোয়েল চত্বর দিয়ে কোটা আন্দোলনকারীরা হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় ঢাবি মেট্রো স্টেশনের নিচে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।  
এদিকে, বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আন্দোলনকারীদের। মঙ্গলবার বিকেলে চানখারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় শহীদুল্লাহ্ হল থেকে চানখারপুল রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে এ পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় পুলিশকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নতুন ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় চার শিক্ষার্থী। এছাড়া আহত হয়ে অর্ধশতাধিক।

হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে জানতে হবে। যারা আক্রান্ত হয়েছে উল্টো তাদের হামলাকারী বানানো হয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরাই প্রথমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন হলে নেতাকর্মীরা অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু যেখানে যাকে যেভাবে পেয়েছে আক্রমণ চালিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা। হলের বিভিন্ন কক্ষ ভাংচুর করা হয়েছে। এরপরও ছাত্রলীগ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে চেয়েছিল।
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই। কোটা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকারী নেই। এখন যারা রয়েছেন, তারা রাজাকারদের প্রেতাত্মা। এরা কোটা সমস্যার সমাধান চায় না। শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি করে রাজাকারের রাজনীতি পুনর্বাসন করতে চায়।’ তাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাদ্দাম।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, ‘যারা আমি রাজাকার বলছেন তাদের উদ্দেশ্য করে একটি কথা বলতে চাই, সবকিছুর জবাব দেওয়া হবে। প্রতিটি ঘটনার জবাব দেওয়া হবে।

×