ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কলাপাড়ায় খালের ৫০ বাঁধ অপসারণ

ফসল ফলবে দু’হাজার একর জমিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৬ জুলাই ২০২৪

ফসল ফলবে দু’হাজার একর জমিতে

প্রশাসনের উদ্যোগে কাটা হচ্ছে অবৈধ বাঁধ

কলাপাড়ায় জলাবদ্ধতার কবল থেকে কৃষককে রক্ষা ও কৃষি উৎপাদনের স্বার্থে পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের অন্তত অর্ধশত অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। ফলে দুই সহ¯্র্রাধিক একর কৃষি জমির দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন পরে সাধারণ কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এসব খালে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে মাছ চাষ করছিল। ফলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন কৃষকরা। কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

বহু কৃষকের জমি অনাবাদি পড়েছিল। বছরের পর বছর, এমনকি যুগ যুগ ধরে খালে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কৃষকের সর্বনাশ করে আসছে। কৃষকরা এ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। তারা বিভিন্ন সময় এর প্রতিবাদে মানববন্ধন স্মারকলিপি দিয়েছেন। দ্বারস্থ হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের কাছে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কৃষক ও কৃষি কাজের স্বার্থে সকল খাল দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান উপজেলা প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেন। যার প্রেক্ষিতে খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। 
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী, টিয়াখালী, ধানখালী ও মহিপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন খালে দেওয়া অন্তত ৫০টি অবৈধ বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। যাতে দুই সহ¯্র্রাধিক একর কৃষি জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। 
বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির জানান, তার ইউনিয়নের পেখার খাল, সোনাপাড়া ভাড়ানি খাল ও পক্ষিয়াপাড়া খালের ১২টি অবৈধ বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। ৫-৭ বছর ধরে ওই বাঁধ দিয়ে খালের পানির প্রবাহ আটকে কৃষিকাজের সমস্যা করা হয়েছে। এখন বাঁধ কাটার ফলে পক্ষিয়াপাড়া, বৈদ্ধপাড়া ও সোনাপাড়া গ্রামের কৃষকের প্রায় দেড় হাজার একর কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূর হলো। চেয়ারম্যান আরও জানান, এখনো বৈদ্যপাড়া, লেমুপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি খালের ১০-১২টি অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা প্রয়োজন।

মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী জানান, তার ইউনিয়নের ফাফ্রুর খালের তিনটি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে নজিবপুর, কমরপুর ও সুধিরপুর গ্রামের জলাবদ্ধতা দূর হবে। আরও কয়েকটি খালের বাঁধ কাটার পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি। ধানখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. টিনু মৃধা জানান, তার ইউনিয়নে ফুলতলী ও মাছুয়াখারী-লোন্দা স্লুইস খালের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮-১০টি বাঁধ কাটা হয়েছে। তবে নোমরহাট হয়ে পশ্চিম ধানখালী ও মধ্য ধানখালীর খালে নতুন করে বাঁধ দেওয়ায় ৭০০ একর কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

ওই বাঁধ দ্রুত না কাটলে কৃষকের চাষাবাদ বন্ধের শঙ্কার কথা জানালেন এ জনপ্রতিনিধি। টিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুজন মোল্লা জানান, তার এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে বাদুরতলী, মধ্যটিয়াখালী ও পূর্বটিয়াখালী এলাকায় বিভিন্ন খালের অন্তত ২১টি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার পানির প্রবাহ সচল হয়েছে। তবে আরও অন্তত ৫০টি বাঁধ কাটা প্রয়োজন বলে তিনি জানালেন। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান জানান, তার এলাকায় সাফাখালী ও আবগঞ্জ খালের পাঁচটি অবৈধ বাঁধ কাটা হয়েছে। তবে আরও কয়টি খালের ১০-১২টি খালের বাঁধ কাটার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন তিনি।

আমতলীতে বাঁধ কাটার দাবিতে বিক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, সুবন্ধির বাঁধ আমতলী উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদ। বাঁধের কারণে চার ইউনিয়নের কৃষকদের  জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ বাঁধ কাটার দাবিতে মঙ্গলবার সুবন্ধি বাঁধ এলাকায় ভুক্তভোগী কয়েকশ’ কৃষক বিক্ষোভ মিছিল করেছে । দ্রুত বাঁধ কেটে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 
ভুুক্তভোগী যমুনা বেগম বলেন, এ বান্দের লইগ্যা মুই রোগা। গাঙের পানি পইচ্চা গ্যাছে।  মানুষ ব্যবহার হরতে পারে না। মোর একটু জাগা আলহে মুই হেই জাগা চইতে পারি না। এই বাঁধ হহালে কাইট্ট্যা দেওয়ার দাবি হরি।
ভুক্তভোগী সেলিম সিকদার বলেন, গত আট দিন ধরে জমির বীজ ভিজিয়ে রেখেছি কিন্তু পানির কারণে জমি চাষাবাদ করতে পারছি না। বীজ ঘরে বসে পচে যাচ্ছে। অন্তত লক্ষাধিক মানুষকে বিপদে ফেলে শতাধিক পরিবারকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে এ বাঁধ। দ্রুত এ বাঁধ কেটে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সুবন্ধি এলাকার হারুন অর রশিদ মৃধা বলেন, বাঁধ কেটে দিলে এই এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভুক্তভোগী চাওড়া ইউপি সদস্য জসিম গাজী বলেন, এ বাঁধের কারণে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ বাঁধের কারণে চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রুত এ বাঁধ কেটে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

×