ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে মহিষের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ১৬ জুলাই ২০২৪

মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে মহিষের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার

দেশের একমাত্র্র সরকারি মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে একের পর এক মহিষের মৃত্যুতে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত তিন মাসে এ খামারে ২১টি মহিষে মৃত্যুর হয়েছে। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মূল রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, খামারের ভেতরে মাটিচাপা দেওয়া মৃত মহিষের বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। খামারে কর্মচারীদের কাছ থেকে মহিষের মৃত্যু সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

জানা যায়, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সুকদ্বারা এলাকায় অবস্থিত মহিষের প্রজনন ও জাত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ খামারে বর্তমানে ৪৭০টি মহিষ রয়েছে। দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন দক্ষতা ও প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন মহিষের জাত উন্নয়ন এবং মহিষের সংখ্যা বাড়াতে ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিন দফায় ভারত থেকে ১৪৯টি পূর্ণ বয়স্ক মহিষ ও ১২০টি বাচ্চা মহিষ আনা হয়। পরে ওই বছরের ডিসেম্বর, চলতি বছরের বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২১টি বাচ্চা মহিষ মারা যায় খামারে। এর মধ্যে ১০টি ভারত থেকে আনা ও ১১টি খামারের বাচ্চা মহিষ। তিন মাসে ২১টি বাচ্চা মহিষের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মনে করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয়রা। 

ফলে কেন মহিষের বাচ্চাগুলো মারা যায়, সে বিষয়ে জানতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালককে চিঠি দেয়, চিঠির উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এবিএম খালেকুজ্জামান।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান, খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম ও ফকিরহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহিদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির প্রধান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা খামার পরিদর্শন করেন। খামারের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছ থেকে মহিষের বাচ্চাগুলোর মৃত্যু সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য নেন। তারা মহিষগুলো মাটি চাপা দেওয়ার স্থান খুঁড়ে মহিষের বাচ্চার হাড়গোড় দেখতে পান। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, এতগুলো মহিষের বাচ্চা হয়তো মারা যায়নি। অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে। তদন্ত করে দেখা উচিত বিষয়টি কী।

স্থানীয় বাসিন্দা অলীপ দাস বলেন, মহিষের বাচ্চা হয়তো দু-একটি মারা যেতে পারে। এত বাচ্চা মারা যেতে পারে না। হয়তো বাচ্চা কোথাও পাঠানো হয়েছে, নাহলে ভারত থেকে যে মহিষ এসেছে, সেখান থেকে কম বাচ্চা আনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বের করা প্রয়োজন।

অ্যাডভোকেট কাজী ইয়াছিন আলী বলেন, মহিষের বাচ্চাগুলো হয়তো কোনোভাবে অন্য কোথাও পাঠানো হয়েছে, যেভাবে হোক অন্য কোথাও চলে গেছে। যথাযথ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।

খামারের মেশিন অপারেটর সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে যে মহিষগুলোর বাচ্চা খুব ছোট ছিল, এক সপ্তাহ-দুই সপ্তাহ বয়স। বাচ্চাগুলো খুব দুর্বল হয়ে গেছে। গাড়িতেই তিন-চারটি মারা গেছে। চিকিৎসা দেওয়ার পরও কিছু মারা গেছে। সেগুলো আমরা মাটি চাপা দিয়েছি।

বাগেরহাট মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. আহসান উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ভারত থেকে মহিষগুলো দীর্ঘ সড়ক পথে খামারে আনসে সাতদিন লেগেছে। এ কারণে কিছু মহিষের বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়ে ও শীতের প্রকোপে মহিষের বাচ্চাগুলো মারা যায়। এখানে কোনো অবহেলা হয়নি। 
 

 

শহিদ

×