ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

৫২ কেজির ‘মণে’ জিম্মি আমচাষিরা, দেখার যেনো কেউই নেই!

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৬ জুলাই ২০২৪

৫২ কেজির ‘মণে’ জিম্মি আমচাষিরা, দেখার যেনো কেউই নেই!

৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে এক মণ হিসাবে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে

বিরূপ আবহাওয়ায় এবার আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফলন কম হয়েছে। যে পরিমাণ আম উৎপাদন হয়েছে, তাতে খরচ উঠা নিয়েই শঙ্কায় আছেন চাষিরা। এছাড়াও, আড়তদারদের কাছেও জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। 

দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার কানসাট, রহনপুর ও ভোলাহাট ঘুরে দেখা যায়, আমচাষিদের জিম্মি করে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে এক মণ হিসাবে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের। আর বাড়তি কেজিতে আম বিক্রি না করলে চাষিদের কাছ থেকে কেনাও বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে এক মণ আমে ১২ থেকে ১৪ কেজি বেশি নেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
 
আমচাষিদের দাবি, বাজারে এক মণ আম ৪০ কেজিতেই বেচাকেনা করতে হবে। আড়তদারদের কাছে জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত ওজনে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে আম চাষ করে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর কয়েক বছর ধরে চলা এ অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না চাষিরা।
 
আমচাষি ইয়াসিন আলী সম্রাট বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমের মণের ওজনের পরিমাণ বাড়ছে। ৪৪ কেজি থেকে শুরু হয়ে এখন ৫৪ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। এক প্রকার জোর করেই ৫৪ কেজিতে মণ হিসাবে আড়তদাররা আম কিনছেন। বেশি ওজনে আম বিক্রি করতে না চাইলে পুরো সিন্ডিকেট কেনা বন্ধ করে দেয়। আর আম যেহেতু পচনশীল, তাই ভয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
 
শাহিন আলী নামে এক আমচাষি বলেন, আমরা এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। শুধু আশ্বাসেই আটকে আছে। এর সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ বিষয়টি এখনই সমাধান না হলে দিনদিন এ অত্যাচার বাড়তে থাকবে। অতিরিক্ত আম নেয়াটা কৃষকদের ওপর জুলুম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর আবহাওয়ার কারণে ফলন প্রায় ৪০ শতাংশে নেমেছে। উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। এর মাঝে আবার বেশি ওজনে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই বিষয়টির দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।
 
কানসাট বাজারের আম বিক্রেতা তরিকুল আলম বলেন, গত চার বছর আগে আমরা ৪২ থেকে ৪৩ কেজিতে মণ ধরে বিক্রি করেছি। কিন্তু ২০২২ সালে ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম কেনেন আড়তদাররা। সেই থেকে বছর বছর ওজন বাড়ছে। চলতি বছর ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ ধরে আম কিনছেন। আমরা এখন বিপাকে পড়েছি। কোথায় যাবো, আর কার কাছে বলব এ অনিয়মের কথা?
 
মুসলিমপুর গ্রামের চাষি আজিজুল ইসলাম বলেন, এ বছর গাছে আম অনেক কম এসেছে। এদিকে, আম বিক্রি করতে এসে শুনি ৫২ কেজিতে এক মণ ধরা হবে। এতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা।
 
কানসাট আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, শুধু কানসাট নয়, রাজশাহী, নওগাঁ, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট সবখানেই বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আমরা চাই, রাজশাহী বিভাগের সব আম বাজারে মণে একরকম ওজন নির্ধারণ হোক। এটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগেও বৈঠকে বসেছিলাম।
 
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জেলায় মোট তিনটি আম বাজার, একেক বাজারে একেক ওজন চলে। তাই আমরা তিনটি আম বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম কিন্তু সমাধান করতে পারিনি। এখন কানসাটে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছেন আড়তদাররা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, আমরা কষ্ট করে আম উৎপাদন করি। কিন্তু আড়তদাররা মণে ১২ থেকে ১৪ কেজি আম বেশি নিচ্ছেন। এ অনিয়ম কয়েক বছর আগে থেকেই চলছে। আমরা এ সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি চাই। তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীতেও আমের ওজন নিয়ে ঝামেলা হয়। আমরা চাই, সব আম বাজারে ওজনের মাপ যেন একই হয়। মণপ্রতি ১২ থেকে ১৪ কেজি বেশি ধরে যে অতিরিক্ত আম নেয়া হয়, তার বাজারমূল্য অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।
 
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জল হোসেন বলেন, কানসাট আম বাজারে ওজন নিয়ে ঝামেলার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনও আমচাষি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। তারপরও আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
 
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন।
 

এবি 

×